অন্যের হয়ে কারাভোগের দায়ে দুইজনের কারাদণ্ড
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪১ পিএম
পরিচয় গোপন করে অন্যের হয়ে কারাভোগের দায়ে দুইজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে মূল আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগকে ১০ বছর ও সোহাগের পরিচয় ধারণ করে কারাগারে যাওয়া মো. হুসেনকে ৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেন এ কারাদণ্ড দেন।
মামলার সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর কদমতলী থানার একটি হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ, মামুন শেখ ও রবিন শেখকে ভিকটিম হুমায়ুন কবির টিটুকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
রায় ঘোষণার সময় ৩ জন আসামিই পলাতক ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ নতুন ওকালতনামা সম্পাদনক্রমে স্বেচ্ছায় আত্মসমপর্ণপূর্বক উচ্চ আদালতে আপিল দায়েরের শর্তে জামিনের প্রার্থনা করেন। কিন্তু আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে সাজা পরোয়ানাসহ জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
বিগত ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর জনৈক সাংবাদিক আদালতে একটি দরখাস্ত দাখিলপূর্বক উল্লেখ করেন যে, অনুসন্ধানে তিনি জানতে পেরেছেন, বিগত ২০১৮ সালের পহেলা জানুয়ারি অত্র আদালতে সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ নাম ধারণ করে যে আসামি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণপূর্বক অদ্যাবধি সাজা ভোগরত অবস্থায় কারাগারে আছেন, সেই আসামি এ মামলার প্রকৃত আসামি সোহাগ নন। প্রকৃত আসামি স্বাধীনভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এ বিষয়ে উক্ত মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, মামলাটির ১নং আসামির সোহাগ ওরফে বড় সোহাগকে অন্যান্য আসামির সঙ্গে বিগত ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং রিমান্ড শেষে বিগত ২২ ডিসেম্বর আসামি সোহাগকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে পলাতক হন সোহাগ।
এ ঘটনাটি সামনে আসার পর ওই সময় কারাগারে থাকা প্রকৃত আসামি সোহাগের ছবির সাথে আত্মসমর্পণ করে জেলে যাওয়া সোহাগের মিল আছে কিনা তা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন প্রদান করতে নির্দেশ প্রদান করেন আদালত।
উক্ত নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপারের কার্যালয় হতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। উক্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, রেজিস্টারদৃষ্টে গত ২০১০ সালের ২২ ডিসেম্বর জেলে যাওয়া বন্দি সোহাগের শনাক্তকারী চিহ্নগুলো বর্তমানে সোহাগ নামধারী আটক বন্দির শরীরে বিদ্যমান নেই। এছাড়া ছবির মধ্যেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এরপর তদন্তে নামে পুলিশ। পুলিশ প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, তদন্তে যদি পাওয়া যায় যে, প্রকৃত আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ বর্তমানে কারাগারের বাইরে আছেন।
পরবর্তীতে বিগত ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি র্যাব-১০ কর্তৃক মূল আসামি সোহাগকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় ৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আসামিরা হলেন- সোহাগ ওরফে বড় সেহাগ, সোহাগের হয়ে জেল খাটা মো. হুসেন, আইনজীবী শরীফ শাহরিয়ার সিরাজী ও মো. ইব্রাহীম হোসেন।
মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ৩১ মে দুইজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। মামলার বিচার চলাকালে চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।