শুরুতে ঈদযাত্রায় স্বস্তি, শেষে দুর্ভোগ উত্তরের পথে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪১ এএম
ছবি:সংগৃহীত
মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় বাসে ওঠেন এনজিওকর্মী শামসুল হক মৃধা। শ্যামলী থেকে রাত সাড়ে ১০টার বাস ছাড়ে এক ঘণ্টা বিলম্বে। যখন সকাল হয়, তখন পর্যন্ত ঠাকুরগাঁওগামী বাসটি যেতে পেরেছে মাত্র ৪২ কিলোমিটার; মানে চন্দ্রায়। বেলা সাড়ে ১১টায় শামসুল বঙ্গবন্ধু সেতু পার হন।
সোমবার ঢাকা ও আশপাশের এলাকার পোশাক কারখানায় একযোগে ঈদের ছুটি হলে ওইদিন বিকালেই ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে।
উত্তরের পথে সাভার, আশুলিয়া, বাইপাইল, চন্দ্রা-এসব এলাকায় সড়কে ছিল উত্তরবঙ্গমুখী মানুষের স্রোত। আর তাতে করে সৃষ্টি হয় দুঃসহ যানজটের; ঈদ যাত্রার শুরুতে সড়ক ও রেলে যে স্বস্তি ছিল, শেষ বেলার চাপে তা পরিণত হয় দুর্ভোগে। তবে নৌযাত্রায় চাপ বাড়লেও তেমন ভোগান্তি ছিল না।
শামসুল হক মৃধা বলছিলেন, খবরে দেখলাম রাস্তায় স্বস্তি। আবার সরকারের কর্তারাও বলছিলেন, এবারে যানজট হবেই না। সে কারণে কাজকর্ম সেরে সোমবার রাতে বুড়িমারী এক্সপ্রেস নামে একটি পরিবহনের স্লিপার বাসে টিকেট কাটি। বাস সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়ল এক ঘণ্টা দেরিতে।
একটি এনজিওর মাওয়া কার্যালয়ে কর্মরত শামসুল বলেন, রাস্তা ভালো হয়েছে, চওড়া হয়েছে। সেতুগুলো হয়েছে। সব মিলিয়ে চমৎকার সব স্থাপনা হয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থাপনা এখনো সেই মাত্রার হয়ে ওঠেনি, যার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের।
পুলিশ বলছে, তারা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। সোমবার পোশাক শ্রমিকদের একযোগে ছুটি হওয়ায় সড়কে চাপ পড়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
যানবাহনের বাড়তি চাপে মঙ্গলবার সকাল থেকে টাঙ্গাইল সদরের ঘারিন্দা বাইপাস থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। চার লেইনের মহাসড়ক থেকে গাড়ি এলেঙ্গায় পৌঁছালে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এলেঙ্গা থেকে সেতুপূর্ব পর্যন্ত দুই লেইনের সড়ক হওয়ায় এই দশা বলে জানাচ্ছেন চালকরা।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ওসি মীর সাজেদুর রহমান বলেন, সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে পরিবহনের খুবই চাপ বেড়েছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিক্রমহাটীতে চাকা ফেটে যাওয়া একটি বাস সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মঙ্গলবার সকালে বেশ কয়েকটি জায়গায় চলন্ত বাস বিকল হয়েছে। অনেক গাড়ির চাকা ফেটে মাঝ সড়কে পড়ে আছে। আর এতেই বিকল হওয়া গাড়ির পেছনে লেগে যায় যানজট। ধীরে ধীরে এই জট দীর্ঘ হতে থাকে।
বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৪৩ হাজার ৪২৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে মোট টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৬ হাজার ৮৫০ টাকা।
এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব অংশে ২৭ হাজার ২৩২টি যানবাহন পারাপার হয়; সেখানে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৪ হাজার ৯৫০ টাকা। আর সেতুর পশ্চিম অংশে ১৬ হাজার ১৯৫টি যানবাহন পারাপার হয়; টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ ৬১ হাজার ৯০০ টাকা।
তবে মঙ্গলবার সকালে গাবতলী অনেকটা ফাঁকাই ছিল। যদিও মঙ্গলবার সন্ধ্যা কোনো টিকেটই নেই বলে জানান হানিফ এন্টারপ্রাইজের কল্যাণপুর কাউন্টারের কর্মী পাভেল।
ঈদযাত্রায় গাড়ির চাপ বেড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার পদ্মা সেতুতে। সেতুর টোল প্লাজায় সাতটি বুথের মাধ্যমে টোল আদায় করেও যানবাহনের চাপ আটকানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে মোটরসাইকেলের লেনে দীর্ঘ লাইন থাকছে।
মঙ্গলবার ভোর থেকেই পদ্মা সেতু এলাকায় অন্যান্য গাড়ির পাশাপাশি মোটরসাইকেলের ঢল নামে। বাইকের চাপ এতই বেড়ে যায় যে তার লাইন ছড়ায় মাওয়া টোল প্লাজা থেকে শ্রীনগর উপজেলা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটারে। অবশ্য বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেলের চাপ কিছুটা কমে আসে।
সেতু কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার চৌধুরী বলেন, টোল প্লাজার মোটরসাইকেল বুথ ছাড়াও সাতটি বুথে টোল নিয়েও হিমশিম খেতে হয়। সকালে বেশি চাপের কারণে মোটরসাইকেলের বুথ বাড়িয়ে দুটি করা হয়েছিল।
ঢাকা-চট্টগ্রামের পথে ঈদযাত্রায় স্বস্তি
আশঙ্কা থাকলেও কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই ঢাকা-চট্টগ্রামের পথে স্বস্তির সঙ্গে বাড়ি ফিরছে মানুষ। অন্যান্যবারের মত এখনও এ পথে বড় ধরনের কোনো যানজট তৈরি হয়নি।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোনো যানজট নেই। হাসিমুখে ভোগান্তি ছাড়াই ঘরমুখো হচ্ছেন মানুষজন।
মঙ্গলবারও যানজট না দেখা যায়নি, তবে রাজধানীর ভেতরের সড়কগুলোতে যানজট থাকায় নির্ধারিত সময়ে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লার কাউন্টারে বাস আসেনি বলে অনেকেই জানিয়েছেন।
শেষবেলায় রেলে বিশৃঙ্খলা
এবার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছিল রেলওয়ে। কমলাপুরে ভিড় এড়াতে উত্তরবঙ্গের দুটি ট্রেন ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ছাড়ার ব্যবস্থা করা হয়। ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৩ এপ্রিল থেকেই টিকেট ছাড়া কেউ যাতে স্টেশনে ঢুকতে না পারে, সেজন্য কমলাপুর স্টেশনে তিন স্তরের প্রবেশ ব্যবস্থা করা হয়।
রেলওয়ের টিটিই, রেলপুলিশ, আনসার, রেলওয়ের নিরাপত্তাবাহিনীর পাশাপাশি কাজ করেন স্কাউট সদস্যরা। তারা টিকেট ছাড়া যাত্রীদের স্টেশনে আসতে দিচ্ছিলেন না। পাশাপাশি ট্রেনের ছাদে চড়াও বন্ধ ছিল।
জানতে চাইলে কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, তৈরি পোশাক কারখানা ছুটির পর সোমবার থেকে ভিড় বেড়ে গেছে। এর আগে যাত্রীরা নির্বিঘ্নেই গেছেন।
গার্মেন্টস ছুটির পর চাপ বাড়ায় কয়েকটি ট্রেনে যাত্রীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। আমরা ছাদে ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছি। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অনেক চেষ্টা করেছেন কেউ যেন ছাদে উঠতে না পারেন। কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে পেরে ওঠেননি।