কিশোর গ্যাং মোকাবিলায় বিশেষ নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৭ পিএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিশোর গ্যাং মোকাবিলার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে সবাইকে যুক্ত হতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, অন্য অপরাধীদের মতো নয়, তাদের (কিশোর গ্যাং) ক্ষেত্রে যেন বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। কিশোর অপরাধীরা যেন সংশোধনের সুযোগ পায়। তাদের জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছেন।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এসব নির্দেশ দেন। বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিংয়ে কথাগুলো বলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কিশোর অপরাধীদের সংশোধনের ওপর জোর দেওয়ার বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিশোররা কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়লেও তাদের যেন দীর্ঘমেয়াদে অপরাধী বানিয়ে না ফেলা হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তাদের নিয়োজিত করার সুযোগ রাখতে বলেছেন । জেলখানায় যখন রাখা হয় তখন তাদের অন্য আসামিদের সঙ্গে রাখা না রাখার কথা বলেছেন সরকারপ্রধান। কিশোর অপরাধীদের সংশোধনের বিষয়ে একটি প্রকল্প নেওয়ার জন্য সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন।
দেশে এখন তিনটি সংশোধানাগার আছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এগুলো এখন ওভারলোডেড। এর সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সংশোধনাগারে আরও সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে বলেছেন, যাতে তারা সংশোধন হতে পারে। মাহবুব হোসেন বলেন, সমাজে, রাষ্ট্রে তারা যেন তাদের প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে পারে সেভাবে তাদের সংশোধন করতে হবে। কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে বলেছেন। কিশোর অপরাধীদের ব্যবস্থাপনায় অবশ্যই মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সেলিংয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে। অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ কাজে সম্পৃক্ত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
কিশোর অপরাধীর সংখ্যা তো অনেক বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইন স্বাভাবিক গতিতে চলবে। যখন কিশোর অপরাধীদের হ্যান্ডেল করব তখন যেন তাকে আরও অপরাধী না বানিয়ে ফেলি। সংশোধনের পরিবেশটা তাকে দেওয়া উচিত। জেলে থাকলেও যেন ভালো নাগরিক হয়ে বের হয়ে আসতে পারে, সে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সংশোধনের সুযোগটা যাতে তারা পান। কিশোর অপরাধীদের হ্যান্ডেল করার সময় মনে রাখতে হবে, তারা ভবিষ্যতের নাগরিক। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অপরাধীদের সঙ্গে তাদের রাখা যাবে না। অবশ্যই তাদের জন্য বিশেষ কাউন্সেলিং ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
এছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে ব্যয় কমিয়ে আমদানি-রপ্তানি এবং স্থানীয় পণ্যের সহজ ও অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে জাতীয় লজিস্টিকস নীতিমালা, ২০২৪-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, লজিস্টিকস ব্যবস্থাপনা নিয়ে এর আগে বাংলাদেশে কোনো নীতিমালা হয়নি। অনেকদিন থেকে এ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরির দাবি ছিল। আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে লজিস্টিকস সাপোর্টের গুরুত্ব অপরিসীম। মোট ব্যয়ের একটা বড় অংশ এখানে আছে।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলকে সরাসরি বাংলাদেশি পোশাক কেনার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নির্ধারিত সময় বা স্বল্পতম সময়ে স্বল্প ব্যয়ে বাধাহীনভাবে যেন পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়। সেজন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে কার্যক্রম গ্রহণ করবে এবং কী কার্যক্রম গ্রহণ করলে এই সার্ভিসটা কার্যকরভাবে দেওয়া সম্ভব হবে, সে সংক্রান্ত একটি দিকনির্দেশনা এ নীতিমালায় রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কাউন্সিল গঠন করা হবে। কাউন্সিল সামগ্রিক দিকনির্দেশনা দেবে। এছাড়া মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি সমন্বয় কমিটি থাকবে।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, রপ্তানি পণ্য উৎপাদন স্থান থেকে ক্রেতার কাছে পৌঁছানো পর্র্যন্ত যাত্রাটি যেন বাধাহীন হয়, সেজন্য কী সহায়তা করা যায়-তার জন্য নীতিমালা করা হয়েছে। আগে এই নীতিমালা ছিল না, এটি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে করা হলো। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, লজিস্টিকসের কিছু অবকাঠামো খাত আছে। যোগাযোগ অবকাঠামোতে আমরা সড়কনির্ভর হয়ে গেছি। আগামী দিনে রেল ও নৌপথ নির্ভরতা বাড়াতে যা যা করণীয়, তা করা হবে।
তিনি বলেন, এছাড়া জিপিএস ট্র্যাকিং ও কানেক্টিভিটি হাব অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট জায়গায় একটি কানেক্টিভিটি হাব হবে। সেখানে পণ্য সরবরাহের জন্য ওয়্যারহাউজ (গুদামঘর) থাকবে। পণ্য যেন পচে না যায়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নীতিমালায় রপ্তানিকে মুখ্য ধরা হয়েছে এবং স্থানীয় বাজারের কথাও বলা হয়েছে। পণ্যের অবাধ যাতায়াতের জন্য যেসব অবকাঠামো দরকার সে বিষয়ে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মাহবুব হোসেন বলেন, এ সংক্রান্ত সব নীতিমালা পরীক্ষা করে তা ব্যবসাবান্ধব করতে বলা হয়েছে। কোন সেবা ব্যক্তি খাতে আসবে, কোনটা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) হবে, কোনটায় সরকার বিনিয়োগ করবে, সে তালিকাও রয়েছে এ নীতিমালায়। মানবসম্পদ উন্নয়ন একটি বড় খাত, আমরা দেখেছি এখানে ১০৬ ধরনের পেশার কথা হয়েছে, সেখানে ৫২ ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণও রয়েছে। সর্বনিু কত ঘণ্টার প্রশিক্ষণ হবে, তারও একটা বিধান থাকছে এই নীতিমালায়।