সস্তায় গরুর মাংস রফতানির প্রস্তাব ব্রাজিলের, বাংলাদেশ চায় জীবন্ত গরু
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৮ পিএম
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল বাংলাদেশে গরুর মাংস রফতানিতে আগ্রহী হলেও বাংলাদেশ চাইছে জীবন্ত গরু আমদানির সুযোগ। পাশাপাশি ব্রাজিল যেন তাদের বাজারে তৈরি পোশাক ও পাটের শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা দেয়, বাংলাদেশ সেই দাবিও জানাচ্ছে।
রোববার ঢাকা সফররত ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরোর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর বৈঠকে এসব বিষয়ই উঠে এসেছে।
আগামী কোরবানিকে সামনে রেখে গরু পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায় কিনা সে বিষয়ে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরাকে অনুরোধ করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
রোববার বিকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। দামে সস্তা হওয়ায় ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই অনুরোধ করেছেন বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
ব্রাজিল আগে থেকেই বাংলাদেশে স্বল্পমূল্যে মাংসজাত পণ্য, বিশেষ করে গরুর মাংস রফতানির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিল। তবে ঢাকায় ভিয়েরোর সঙ্গে সাক্ষাতের পর বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন মাংসজাত পণ্য নয়, বরং ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি করতে চায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে গত কয়েক মাস ধরেই আলোচনায় আছে গরুর মাংসের দাম।
অনেকেই অভিযোগ করেন ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ থাকার সুযোগে গরুর মাংসের দাম ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে এক শ্রেণির বিক্রেতা।
এই নিয়ে শোরগোলের মধ্যেই খবর বেরোয় যে বাংলাদেশে মাংসজাত পণ্য হিসেবে গরুর মাংস রফতানির প্রস্তাব দিয়ে ব্রাজিল বলছে তারা কেজি প্রতি পাঁচশ টাকারও কম দামে গরুর মাংস সরবরাহ করতে পারবে।
আজ ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর বক্তব্যেও এর সত্যতা বেরিয়ে এসেছে। তবে তিনি বলেছেন মাংস নয় বরং কোরবানি ঈদ সামনে রেখে জীবন্ত গরুই আমদানি করতে চাইছে বাংলাদেশ।
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, সাক্ষাতে ব্রাজিলের পক্ষ থেকে অ্যানিমেল প্রোটিনটা ফোকাসে ছিল। বিশেষ করে ব্রাজিল অত্যন্ত কম দামে মাংস রফতানি করে। এ বিষয়ে তারা কথা বলেছে। আমরা আগামী কোরবানিকে সামনে নিয়ে তাদের ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছি। যদি সস্তাই হয় তাহলে কোরবানির সময় গরু পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায় কিনা, আমরা পসিবিলিটিগুলো দেখবো। বেসিক্যালি ইনিশিয়াল ডায়ালগ। মাত্র শুরু।
সাবেক রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান দু বছর ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
তিনি বলছেন যে, কৃষি ও পশু, এই দুই খাতে ব্রাজিল অনেকটা বিপ্লব করে ফেলেছে। এক সময় তারাও আমদানি করত। কিন্তু গরুর জেনেটিক বিবর্তনে দারুণ সফল হয়ে দেশটি এখন গরুর দুধ ও মাংস উৎপাদনে অন্যতম শীর্ষ দেশ। তাদের এই প্রযুক্তি বাংলাদেশ আনতে পারলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব হবে।
মূলত কৃষি ও পশু খাতে নজিরবিহীন সাফল্যের কারণেই ব্রাজিলকে অনেকে এখন বিশ্বের ‘ফুড বাস্কেট’ হিসেবে অভিহিত করেন। ব্রাজিল গত বছর চীন ও হংকং-সহ বিশ্বের ১২৬টি দেশে গরুর মাংস রফতানি করেছে।
তবে বাংলাদেশে কিছু বড় ব্যবসায়ী গরুর মাংস ব্যবসায় (খামার ও মাংসজাত পণ্য) বিনিয়োগ করেছেন গত এক দশকে। গরু কিংবা মাংস আমদানির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান থাকায় সরাসরি মাংস আমদানির দিকে খুব একটা আগ্রহী নয় বাংলাদেশ।
তৈরি পোশাকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য বাংলাদেশ ব্রাজিলের বাজারে রফতানি করতে পারছে না কিছু বিধিনিষেধের কারণে। ব্রাজিল সেসব বিধি নিষেধ সরাতে বাংলাদেশে মাংস রফতানিতে জোর দিতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।
রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান বলছেন, বাংলাদেশ মাংস আমদানির ওপর যে বিধিনিষেধ দিয়ে রেখেছে সেটা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার রুলসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করে ব্রাজিল, যদিও বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে সেটি তারা ডব্লিউটিএ ফোরামে তোলেনি।
তিনি বলেন, এখন দু'পক্ষ আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
বিবিসি বাংলা