ডিজিটাল হুন্ডিতে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, আটক ৫

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪০ পিএম

দুবাই থেকে দেশীয় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করে টাকা পাচার করছে একটি চক্র। গত তিন থেকে সাড়ে ৩ মাসে হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার বেশি পাচার করেছে চক্রটি। এক্ষেত্রে তারা একটি বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করছে। এই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বৃহস্পতিবার তাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে সংস্থাটি।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. নাসিম আহমেদ (৬২), ফজলে রাব্বি সুমন (৩২), মো. কামরুজ্জামান (৩৩), মো. জহির উদ্দিন (৩৭) এবং মো. খায়রুল ইসলাম ওরফে পিয়াস (৩৪)। তাদের কাছ থেকে ৬টি মোবাইল, ১৮টি সিমকার্ড, একটি ল্যাপটপ, ৬টি মডেম এবং ২৮ লাখ ৫১ হাজার ২০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
সিআইডি জানায়, এই চক্র চট্টগ্রামের বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ তাসলিমা অ্যাসোসিয়েটস’র কাছ থেকে এজেন্ট সিম সংগ্রহ করে। এরপর এই সিমগুলো মডেমের মাধ্যমে ল্যাপটপে বা কম্পিউটারে কানেকশন করে। কানেকশনের করা হলে জেট রোবটিক অ্যাপস’র মাধ্যমে কানেকশনকৃত সিমের কন্ট্রোল চলে যায় অ্যাপস্ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিদের হাতে। ওই ব্যক্তিরা দুবাই অফিসে বসে এই ডিজিটাল হুন্ডির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
সিআইডি জানায়, এই হুন্ডি চক্রটির মূল হোতা শহিদুল ইসলাম ওরফে মামুন। সে ২০২০ সাল থেকে দুবাই থাকে। সেখানে মামুনসহ আরো পাঁচজন জেট রোবটিক অ্যাপস নিয়ন্ত্রণ করে। মালয়েশিয়ান সফটওয়্যার ডেভেলপারের মাধ্যমে তৈরিকৃত এই অ্যাপস্ কাস্টোমাইজ করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে এই চক্র। তখন এজেন্ট সিমগুলো বাংলাদেশে থাকলেও এর নিয়ন্ত্রণ তারা দুবাই বসে করতে পারে। দুবাই বসেই তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন নম্বরে ক্যাশ-ইনের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পারে।
সিআইডি বলছে, এই হুন্ডির কাজে চক্রটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা তাদের এজেন্টদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে। এই সংগ্রহকৃত অর্থ কোন নম্বরে বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা প্রেরণ করতে হবে তা জেনে নেয় এই চক্র। তখন বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহকৃত এজেন্ট সিম থেকে অ্যাপস্ ব্যবহার করে প্রবাসীদের আত্মীয়দের নম্বরে পাঠিয়ে দেয় চক্রটি। এই চক্র চট্টগ্রামের চাদগাঁও অবস্থিত বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ তাসলিমা অ্যাসোসিয়েটসের ১৫০টি এজেন্ট সিমের ব্যবহার করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে মালিবাগে নিজ কার্যালয়ে সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী বলেন, গত তিন মাসে ৪০০ কোটি টাকা বাংলাদেশে আসতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে জেট রোবোটিক অ্যাপসের মাধ্যমে। চট্টগ্রামের বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ তাসমিয়া অ্যাসোসিয়েটস। প্রতিষ্ঠানটির কাছে রয়েছে এক হাজার ১০০ বিকাশ এজেন্ট সিম। এসব এজেন্ট সিমের তাদের পারফর্ম ভালো না সেসব এজেন্টের সিমগুলো ডিএসওরা নিয়ে জেট রোবোটিক অ্যাপস ব্যবহারকারীদের সরবরাহ করে। এজেন্ট সিম নেওয়ার পর বিকাশ থেকে ই-মানি এজেন্ট সিমে আনা হয়। এ এজেন্ট সিমের কয়েকটি ভাড়া নেয় এ রোবোটিক অ্যাপস। দুবাই বসে মামুন অ্যাপসের মাধ্যমে এজেন্ট সিমের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যায়। সে তখন বিকাশের মাধ্যমে রুট পর্যায়ে চাহিদা অনুযায়ী টাকা পাঠাতে পারে। তখন আর বাংলাদেশে বিকাশের এজেন্টদের প্রয়োজন হয় না। কারণ বিকাশের এজেন্ট সিমগুলো গ্রহণ করে থাকে শুধু ই-মানি ট্রান্সজেকশনের জন্য।
সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী বলেন, শুধু এ জেট রোবোটিক অ্যাপসই নয়, এ রকম বেশকিছু অ্যাপস বাংলাদেশে চলমান। আমরা বেশকিছু এমন অ্যাপসের সন্ধান পেয়েছি। এরই মধ্যে আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম চলমান। চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় এ কার্যকম চলছে।
সিআইডি বলছে, এ ধরনের ডিজিটাল হুন্ডি কার্যক্রমের কারণে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ কার্যক্রম থেকে বিকাশ কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না। কারণ যেসব সিম ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো বিকাশ এজেন্ট সিম। তাছাড়া অস্বাভাবিক লেনদেন হলে সেটা দেখার দায় বিকাশেরই।