Logo
Logo
×

জাতীয়

দুই দশক ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিতে ‘মিজান সিন্ডিকেট’, যা জানাল র‌্যাব

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫৫ পিএম

দুই দশক ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিতে ‘মিজান সিন্ডিকেট’, যা জানাল র‌্যাব

দুই দশকে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট বিক্রির পদ্ধতি ও অপারেটর বদলেছে কয়েকবার, তবে বদলাননি কেবল কমলাপুর রেলস্টেশনের মিজান ঢালী। দীর্ঘ এই সময় ধরেই সিন্ডিকেট গড়ে ‘টিকিট কালোবাজারি’ করে আসছিলেন তিনি। র্যাব জানায়, ৪৮ বছর বয়সি মিজান ঢালী রেলের অনলাইন টিকিট বিক্রির প্ল্যাটফর্ম সহজ ডটকমের কমলাপুর স্টেশনের অফিস সহকারী। সহজের আগে যেসব প্রতিষ্ঠান রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে পেয়েছে, তার সবগুলোতেই কাজ করেছেন মিজান। ২০০৩ সাল থেকে এভাবে কমলাপুরেই থেকেছেন তিনি, গড়ে তুলেছেন টিকিট ‘জালিয়াতির সিন্ডিকেট’।

ঈদের আগে টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে অভিযানে নেমে বৃহস্পতিবার মিজান ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করে এমন তথ্য দিয়েছে র্যাব। র্যাবের অভিযানে মিজানসহ নয়জন বৃহস্পতিবার গ্রেফতার হয়েছেন; তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন এই বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

মিজান ঢালীর ভাতিজা সহজ ডটকমের কমলাপুর স্টেশনের অফিস সহকারী সোহেল ঢালী (৩০), সহজের স্টেশন রিপ্রেজেন্টেটিভ সবুর হাওলাদার (৪০), সহজের কমলাপুর রেলস্টেশন সার্ভার রুমের অপারেটর নিউটন বিশ্বাসকেও গ্রেফতার করেছে র্যাব। 

এছাড়া এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মো. সুমন (৩৯), জাহাঙ্গীর আলম (৪৯), শাহজালাল হোসেন (৪২), মো. রাসেল (২৪) ও জয়নাল আবেদীন (৪৬) নামে আরও পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টিকিট জব্দ করার কথা র্যাব জানিয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সহজ ডটকমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা পরে যোগাযোগ করে বক্তব্য দেবে।

যেভাবে গায়েব রেলের টিকিট
সহজের মিজান ঢালীর কালোবাজারির তথ্য তুলে ধরে র্যাব কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, ২০০৩ সাল থেকে তিনি টিকিট কালোবাজারি করে আসছেন; কিন্তু রেলের কর্মী হিসেবে পরিচয় থাকায় কখনো গ্রেফতার হননি।

খন্দকার মঈন বলেন, আট বছর আগে নিজের ভাতিজা সোহেল ঢালীকেও এ পথে নিয়ে আসেন। চক্রের সদস্যরা প্রতিদিন পাঁচশর বেশি টিকিট কালোবাজারি করে আসছিলেন। এবারের রোজার ঈদ ঘিরে তারা ৩ হাজারের মতো টিকিট কালোবাজারে বিক্রির টার্গেট নিয়েছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০০৩ সালে রেলের টিকিট বিক্রিতে চুক্তিবদ্ধ হয় ডেফোডিল নামে একটি কোম্পানি। সেখানে কমলাপুর রেলস্টেশন শাখায় পিয়ন হিসেবে যোগ দেন মিজান।

পরে রেল চুক্তিবদ্ধ হয় সিএনএস বিডির সঙ্গে। অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে সেখানেও চাকরি পান মিজান।

সবশেষ ২০২০ সালে রেলওয়ে টিকিট বিক্রির কাজ পায় সহজ ডটকম। সেখানেও মিজানের চাকরি বহাল থাকে।

র্যাব বলছে, টিকেটের চুক্তি যখন এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানির হাতে যায়, তখন পুরনো প্রতিষ্ঠানের ৮০ শতাংশ কর্মীর চাকরি বহাল থাকবে- এ রকম শর্ত যুক্ত থাকায় মিজান বারবার চাকরি পেয়ে যান। দীর্ঘদিন কমলাপুর রেলস্টেশনে চাকরি করায় সারা দেশে রেলওয়ের বড় বড় কর্মকর্তা এবং রেলের খুঁটিনাটি তার সব জানা হয়ে যায়।

মঈন বলেন, রেলের বড় কর্মকর্তাদের পরিচয়ের সূত্র ধরেই মিজান সারা দেশের স্টেশনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে কালোবাজারি করতেন। সহজের কমলাপুর রেলস্টেশন সার্ভার রুমের অপারেটর নিউটন বিশ্বাসসহ অন্যরা বিভিন্নভাবে তাকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতেন।

মঈন বলেন, বিশেষ করে প্রতিটি ট্রেনের ২ শতাংশ টিকিট সংরক্ষিত হিসেবে রাখা হয়। ট্রেন ছাড়ার ১২ ঘণ্টা আগে সেগুলো সার্ভারে ওপেন করে দেওয়া হয়। আর সেই খবর আগেভাগেই পেয়ে যেতেন মিজান। তার ভাতিজা সোহেল অনলাইন থেকে বা রেলস্টেশনে সহজ ডটকমের অফিসে বসে কিংবা রেলের কাউন্টারম্যানদের মাধ্যমে ওই টিকিটগুলো সংগ্রহ করে ফেলতেন।

মঈন বলেন, এরপর সেগুলো চড়া দামে বিক্রি করা হতো। এছাড়া কোনো টিকিটের বুকিং বাতিল হলে সেটাও সার্ভার রুম থেকে জানিয়ে দেওয়া হতো মিজান সিন্ডিকেটের লোকজনকে। এভাবেই ট্রেনের টিকিটগুলো ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গায়েব হয়ে যেত।

ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ দিনগুলো ঘিরে মিজান ও তার সহযোগীরা অনেক বেশি টিকিট সংগ্রহ করতেন জানিয়ে র্যাব জানায়, প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের কর্মচারী ও টিকিট কাউন্টার ম্যানদের মাধ্যমে প্রায় ২-৩ হাজার টিকিট কালোবাজির মাধ্যমে বিক্রি করা হতো।

র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, টিকিট বিক্রির টাকা যেত দুই ভাগে। অর্ধেক পেতেন জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সহজ ডটকমের কর্মী ও স্টেশনের কাউন্টার ম্যানরা। বাকিটা পেতেন মিজান ও সোহেলরা।

তিনি বলেন, এই অর্থ কখনো তারা হাতে-হাতে বুঝে নিতেন, আবার কখনো মোবাইলেও লেনদেন করতেন। সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকে এভাবে প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করেন। তাদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে গত ছয় মাসে ৯৮ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম