‘টিভিতে জিম্মিদের পরিবারের প্রতিক্রিয়া দেখে দস্যুরা আরও অনমনীয় হয়’
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৪, ০৪:১৩ পিএম
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের টেলিভিশনে কী দেখাচ্ছে, কী হচ্ছে সেটি কিন্তু যারা (জলদস্যু) হাইজ্যাক (অপহরণ) করেছে তারা দেখে, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব টেলিভিশন দেখার সুযোগ আছে। যখন এ বিষয়টিকে অতিগুরুত্ব দেওয়া হয়, জিম্মিদের পরিবারের প্রতিক্রিয়া যখন ওরা দেখে, তখন হাইজ্যাকারদের অবস্থান আরও অনমনীয় হয় এবং হচ্ছে। এটার নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট (নেতিবাচক প্রভাব) হচ্ছে।
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজি পুকুর লেনের ওয়াইএনটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিষয়টিকে সবারই সতর্কভাবে দেখা দরকার। আমাদের মূল লক্ষ্য তো নাবিকদের এবং জাহাজটাকে মুক্ত করা। সুতরাং আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীলভাবে যদি আচরণ করি তা হলে এই পরিস্থিতির উত্তরণ সহজ হবে। এটি নিয়ে সরকার কাজ করছে, অতীতেও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ১০০ দিনের মাথায় একই কোম্পানির জাহাজ এবং নাবিকদের মুক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। এখনো আমরা আশা করছি, আমাদের যে সমন্বিত প্রচেষ্টা আছে, সুস্থভাবে নাবিকদের ও জাহাজটাকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে পারব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, সুন্দর ও অবাধ হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্নমত থাকতেই পারে। যে কোনো দেশের ভিন্নমতকে আমরা সম্মান করি। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশিরভাগ রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। পৃথিবীর প্রায় ৮০ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সম্পর্ক দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নীত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। সুতরাং আমাদের বিবেচনায় আমাদের এই অঞ্চলের নিরিখে অত্যন্ত সুন্দর, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র গতকাল আবারও বলেছে— বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি- এ বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের মতামত দিতেই পারে। তারা প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, বিরোধী দল অংশগ্রহণ করেনি। বাংলাদেশে ৪৪ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৯ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ করা না করা, সেটি সরকারের ওপর বর্তায় না, সেটি সেই দলের দায়িত্ব। সেই দল বরং নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করার লক্ষ্যে দেশে সহিংসতা ঘটিয়েছিল। সেই সহিংসতার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল, তাদেরই শুধু গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেটি বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব এবং সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে তারা কাজ করছে। আমরাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্য, সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করার জন্য এবং আমাদের যে বহুমাত্রিক সম্পর্ক, সেটিকে আরও বিস্তৃত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একসঙ্গে কাজ করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তবে আমাদের দেশে অত্যন্ত সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রমজান কিংবা ঈদ উপলক্ষে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার কোনো কারণ নেই জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, দ্রব্যমূল্য যাতে মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে, অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে, সে জন্য সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, রমজান উপলক্ষ্যে ন্যায্যমূল্যে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এক কোটি মানুষকে ন্যায্যমূল্যে চালসহ অন্যান্য সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। এর পরও দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় অসাধু ব্যবসায়ীরা— এমনকি খুচরা বিক্রেতারাও একটি বাজারে একটি পণ্যের দাম একরকম, আরেক বাজারে অন্যরকম করে ইচ্ছেমতো দাম নেওয়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে এই প্রবণতা আগে দেখা যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখলাম, মানুষ এ বিষয়ে আগের তুলনায় অনেক বেশি সোচ্চার হয়েছে। অহেতুক দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর প্রবণতা রোধ করার ক্ষেত্রে মানুষের সোচ্চার হওয়াটা সহায়ক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একই পণ্য বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন দামে যে বিক্রি হচ্ছে তা নিয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকা অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সহায়তা চাই, আমাদের সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে, যাতে কেউ অহেতুক পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করতে না পারে।