Logo
Logo
×

জাতীয়

বরাদ্দ চেয়ে জিএম কাদেরের চিঠি

বিরোধীদলীয় নেতার সরকারি বাড়ি প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৪, ০৯:১৫ পিএম

বিরোধীদলীয় নেতার সরকারি বাড়ি প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী

২৯ মিন্টো রোডে বিরোধীদলীয় নেতার সরকারি বাড়ি।

বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ২৯ মিন্টো রোডের সরকারি বাড়িটি বরাদ্দ চেয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। বাড়িটি জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার জন্য নির্ধারিত সরকারি বাসভবন। তবে এখনো তার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি বাড়িটি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একমাত্র খালেদা জিয়া ছাড়া এই ভবনে কোনো বিরোধীদলীয় নেতা কখনো ওঠেননি। বাড়িটি বর্তমানে প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী অবস্থায় রয়েছে।

রাজধানীর মিন্টো রোডের ২৯ নম্বর বাড়ির ভেতরে থাকা আধাপাকা টিনশেড ঘরে থাকেন কামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি। মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরের স্থায়ী বাসিন্দা কামালের বয়স এখন ৫০ বছর। তিনি তার চাকরিজীবনের ১৭ বছর পরিবার নিয়ে এখানেই কাটিয়ে দিয়েছেন। 

বিশাল আয়তনের বাড়িটির পরিচ্ছন্নতা কর্মী কামাল হোসেন। তিনি বলেন, যার জন্য বাড়িটি  নির্ধারিত, এখন পর্যন্ত এমন কাউকে তিনি এখানে থাকতে দেখেননি। ফলে বাড়িটি অভিভাবকশূন্য রয়েছে। চাকরির বাকি সময়ে কোনো বিরোধীদলীয় নেতাকে এই বাড়িতে থাকতে দেখে যেতে পারলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবেন তিনি। এটা তার জীবনে একটি অপূর্ণতাও বটে। 

বাড়িটির ভেতরের আধপাকা টিনশেড ঘরে সপরিবার থাকেন লাল মিয়া নামের আরেকজন। তার বয়স ৫৫ বছর। তিনি পেশায় মালি। এই বাড়িতে  তিনি ৮ বছর ধরে আছেন। 

লাল মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, যার জন্য বাড়িটি নির্ধারিত, তিনি থাকলে বাড়িটি প্রাণবন্ত ও সরগরম থাকত। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের যাতায়াত থাকত। বিরোধীদলীয় নেতা না থাকলেও বাড়িটির ভেতরের আধাপাকা টিনশেড ঘরে অন্তত ৩০ জন বসবাস করছেন। তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করেন। 

ঢাকার অন্যতম নিরাপদ এলাকা মিন্টো রোড। মন্ত্রিপাড়া বলেও পরিচিত এটি। গণপূর্ত অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ব্রিটিশ আমলে আড়াই একর জায়গার ওপর ২৯ নম্বর বাড়িটি তৈরি করা হয় তখনকার সরকারি কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য। স্বাধীনতার পর একসময় বাড়িটি জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার জন্য নির্ধারণ করা হয়। বাড়িতে সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া উঠেছিলেন। ২০০১ সাল পর্যন্ত তার নামে বাড়িটি বরাদ্দ ছিল। 

এরপর আর কোনো বিরোধীদলীয় নেতা এ বাড়িতে ওঠেননি। লাল-সাদা রঙের দোতলা বাড়িটি এখন অনেকটাই শ্রীহীন। বিরোধীদলীয় নেতা থাকেন না বলে গণপূর্ত অধিদপ্তরও বাড়িটি সংস্কার করছে না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কার্যালয় থেকে অল্প দূরত্বে রাস্তার ওপর থেকে চোখে পড়ে ২৯ নম্বর বাড়িটি। বাড়িটির আশপাশে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার, ডিএমপি কমিশনার, একজন বিচারপতি, একজন নির্বাচন কমিশনার, পররাষ্ট্র সচিব, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, ঢাকা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বাসভবন রয়েছে। 

বাড়িটির মূল ফটক খোলা পাওয়া গেল। ফটকে ছিলেন না কোনো নিরাপত্তাকর্মী। প্রাচীরের ভেতরে বাড়ির সামনের অংশে পাইন, রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ আছে। আঙিনায় আছে সবুজ ঘাস। তবে হোঁচট খেতে হলো ভবনসহ পুরো বাড়ি ঘুরে। ভবনের বেশ কয়েকটি দরজা-জানালা ভাঙা। বেশির ভাগ আসবাব নষ্ট। বাড়ির গ্যারেজের অবস্থাও খারাপ। সব মিলিয়ে বাড়িটি এখন ব্যবহারের প্রায় অনুপযোগী।

গণপূর্ত অধিদপ্তর বলছে, বাড়িটি সংস্কার করে বসবাসের উপযোগী করতে অন্তত তিন মাস লাগবে। বাড়ির বেশ কয়েকটি জায়গায় ঝোপঝাড়ও দেখা গেল। এ ছাড়া বাড়ির ভেতরে আম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলাসহ বিভিন্ন ফলের গাছ রয়েছে। সেখানে শীতকালীন সবজি দেখা গেল। 

কর্মচারীরা জানান, তারাই এসব সবজি লাগিয়েছেন। বাড়িটির পেছনের অংশে বেশ কয়েকটি আধপাকা টিনশেড ঘর। সেখানে কয়েকটি পরিবার থাকছে। এর মধ্যে রয়েছে বিরোধীদলীয় নেতার জন্য নির্ধারিত সরকারি বাসভবনের তিনজন কর্মচারী মালি লাল মিয়া, পরিচ্ছন্নতাকর্মী কামাল হোসেন ও পানির লাইনের মিস্ত্রি (প্লাম্বার) আকরাম হোসেনের পরিবার। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কর্মীদের একজন থাকেন সেখানে। দুটি টিনশেড ঘরে ১০ জন ব্যাচেলর ভাড়া থাকেন। তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত। পরিবার নিয়ে আলাদা ঘরে যারা থাকেন, তাদের মধ্যে আছেন ওসমানী উদ্যানের এক পাহারাদার, গণপূর্ত অধিদপ্তরের এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর গাড়িচালক ও মিন্টো রোডে অবস্থিত মসজিদের ইমাম। সব মিলিয়ে ছয়টি পরিবার, ব্যাচেলরসহ অন্তত ৩০ জন টিনশেড ঘরে থাকছেন। 

গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পার্টির (জাপা) রওশন এরশাদ বাড়িটি বরাদ্দ চেয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। তবে তখন তার নামে বাড়িটি বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। 

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাড়িটি বরাদ্দের জন্য চিঠি দেন। তখন বাড়িটি তার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে তিনি বাড়িটিতে ওঠেননি। 

সর্বশেষ ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পার্টির জিএম কাদের বাড়িটি বরাদ্দ চেয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। তবে এখনো তিনি বরাদ্দ পাননি। 

গণপূর্ত অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিরোধীদলীয় নেতার জন্য নির্ধারিত সরকারি বাড়িতে পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মালী ও প্লাম্বার আছেন। এর বাইরে সেখানে আর কারও থাকার সুযোগ নেই। তবে বাড়িটি দীর্ঘদিন খালি পড়ে থাকায় অনেকে সুযোগ নিচ্ছেন বলে মনে করেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিরোধীদলীয় নেতা ওই বাড়িতে বসবাস করেন না। যে কারণে বাড়িটির জন্য নির্ধারিত পদের লোকজনের বাইরের কেউ কেউ সেখানে থাকার সুযোগ নিচ্ছেন। তবে বিরোধীদলীয় নেতা যখনই ওই বাড়িতে উঠবেন, তখন বাইরের লোকদের চলে যেতে হবে। 

বাড়িটি সংস্কার না করার বিষয়ে মাহবুব হাসান বলেন, যেহেতু সেখানে কেউ থাকেন না, তাই সংস্কার করেও লাভ নেই। যখন বিরোধীদলীয় নেতার নামে বাড়িটি বরাদ্দ হবে তখন বাড়িটির সংস্কারকাজে হাত দেওয়া হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম