Logo
Logo
×

জাতীয়

বিআইডিএসের সেমিনারের তথ্য

দ্বিতীয় শ্রেণিতে শিশুরা সবচেয়ে বেশি শেখে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৪, ১০:১৪ পিএম

দ্বিতীয় শ্রেণিতে শিশুরা সবচেয়ে বেশি শেখে

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত তিনটি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো ধৈর্য্য, আত্মসংযম ও পরার্থপরতা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এসব শিক্ষা যারা শিশু বয়সে পায় তাদের শিক্ষাক্ষেত্রের ফলাফল এবং ভবিষ্যতে কর্মজীবনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। 

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক সেমিনারে এসব তুলে ধরা হয়েছে। রোববার রাজধানীর আগারগাঁও-এ বিআইডিএস’র  সম্মেলনকক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইকোনমিক্স এর প্রফেসর ড. শ্যামল চৌধুরী। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী প্রমুখ। 

গবেষণা প্রবন্ধে ড. শ্যামল মন্ডল বলেন, আমরা একটি জরিপ পরিচালনা করেছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্যাম্পল হিসেবে বাছাই করে তাদেরকে ধৈর্য্য, আত্মসংযম এবং পরার্থপরতা এ তিন বিষয়ে আলাদা ক্লাস করিয়েছি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষককে আগে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর সপ্তাহে একদিন একটি করে ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এরপর তাদের বছরে তিনটি স্কুলের পরীক্ষার নম্বর মূল্যায়ন করার পাশাপাশি আমরা নিজেও ডিসেম্বর মাসে একটি আলাদা পরীক্ষার ব্যবস্থা করি। 

ফলাফল হিসেবে দেখা গেছে, যেসব শিশু এই ক্লাসগুলো করেছেন তারা অন্য শিশুদের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি ভালো ফলাফল করেছেন। তবে এক্ষেত্রে যেটি পাওয়া গেছে সেটি হলো দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি দ্রুত এসব শিক্ষা ধারণ করতে পেরেছে। এরপর তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত ভালো কার্যকর হয়েছে। পরবর্তীতে যত বড় হয়েছে এসব শিক্ষার ক্ষেত্রে ততই ধারণ ক্ষমতা কমেছে।

তিনি আরও বলেন, গবেষণা থেকে পাওয়া যায় যে, এ ধরণের শিক্ষা গ্রহণের ফলে শিশুদের মধ্যে সামাজিক ও মানবিক দক্ষতা বেড়েছে। এজন্য সরকারিভাবে প্রাইমারি স্কুলে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত এসব বিষয়ে শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে হবে। তবে এ বিনিয়োগ খুব বেশি না হলেও রিটার্ন বা ফল আনবে অনেক বেশি। এসব গুনাবলী পরবর্তীতে তাদের ব্যক্তি ও কর্মজীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়তে সহায়ক। কেননা আমরা দেখি যে শিক্ষার সঙ্গে অর্থের সম্পর্ক আছে। যে যত বেশি শিক্ষা লাভ করে পরবর্তী জীবনে সে তত বেশি অর্থ আয় করার মতো কর্মে যুক্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে যদি এসব সামাজিক শিক্ষা দেওয়া যায় তাহলে এরও অর্থনৈতিক প্রভাব অনেক বেশি। যেমন কোন শিশু যদি ধৈর্য্যশীল হয় তাহলে সে বেশি পড়ালেখা করতে পারবে। পরবর্তীতে ব্যক্তি ও কর্মজীবনে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে। যে মানুষ ধৈর্যশীল হবে তিনি সব কিছু মেনে নিতে শিখবে। বেশি সঞ্চয় করতে পারবে। 

কর্মজীবনে ধৈর্যর সঙ্গে অনেক ভালো কাজ করতে পারবে। পরোপকারি হতে শিখলে ব্যক্তি, সমাজ ও কর্মজীবনে এর ব্যাপক প্রভাব আছে। পাশাপাশি আত্মসংযমী হলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখবে। জীবনে হতাশা হলে নেশা বা কিশোর গ্যাং এর সদস্য হওয়ার  মতো পরিস্থিতিতেও নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে। এরকম অনেক ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশ গুলোতে ছোট অবস্থায়ই এসব শিক্ষা দেওয়া হয়। আমাদের দেশে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর পাঠ্যসূচিতে এসব বিষয় যুক্ত করা দরকার। 

ড. শামসুল আলম বলেন, গবেষণাটি ভালো হয়েছে। তবে এখনকার সিলেবাস পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সেখানে এসব না থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি কি পরিমাণ সরকারি বিনিয়োগ দরকার সেটিও গবেষণার মধ্যে উল্লেখ থাকলে ভালো হতো। 

ড. বিনায়ক সেন বলেন, স্কুলে যাওয়ার পর থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শিশুরা সবচেয়ে বেশি ধারণ করতে পারে। এটা এই গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। তাই আমাদের মনে রাখা উচিত দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর মধ্যে যাতে কোন শিশু ঝড়ে না পড়ে। ক্লাশ ওয়ান ও টুতে বেশি নজর দিতে হবে। বাংলাদেশে অতি দারিদ্র্যের দিন শেষ। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষায় দক্ষতা নির্মাণ। সেই দক্ষার ভিত্তি স্থাপিত হয় ক্লাশ টু ও থ্রির মধ্যেই। এ বিষয়ে সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম