‘দরবেশ বাবা’ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:২৫ পিএম
‘দরবেশ বাবা’ পরিচয়ে পারিবারিক সমস্যা সমাধানের কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এদের খপ্পরে আমেনা খান নামে এক চিকিৎসক খুইয়েছেন ২৫ লাখ টাকা। পরে প্রতারণা বুঝতে পেরে তিনি রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন।
এর সূত্র ধরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) রোববার মাগুরা থেকে চক্রের মূলহোতা আশিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয় চক্রের আরও ১৮ সদস্যকে।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।
মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, চক্রটি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করে। এর সদস্যরা দুটি ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে। প্রথমে তারা অর্থসম্পদশালী ব্যক্তিদের দারোয়ান বা ড্রাইভারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। তাদের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিবারের গোপন তথ্য সংগ্রহ করে এবং পারিবারিক সমস্যাগুলো জেনে নিয়ে বাড়ির মালিক ও তার স্ত্রীর নম্বর সংগ্রহ করে।
তারপর তারা স্ত্রীর কাছে স্বামীর বদনাম এবং স্বামীর কাছে স্ত্রীর বদনাম করে দুজনেরই কান ভারী করে। এতে একে অপরকে সন্দেহ করে, তখন স্বামী-স্ত্রী দুজনই সমস্যা নিরসনের পথ খুঁজতে থাকেন। এই সুযোগে প্রতারক মসজিদে নববির ইমাম দাবি করে সমস্যা সমাধানের নামে প্রতারণা করে।
তিনি আরও বলেন, চক্রের দ্বিতীয় কৌশল হলো গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চমকপ্রদ ও চোখ ঝলসানো বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে প্রলুব্ধ করা। লটারি পাইয়ে দেওয়া, ভাগ্যবদল, পাওনা টাকা আদায়, মামলায় জেতানো, পারিবারিক সমস্যা সমাধানের কথা বলে তাদের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষকে আগ্রহী করে তোলা হয়। এ বিজ্ঞাপন দেখে কেউ তাদের ফোন দিলেই শুরু হতো প্রতারণা। এভাবে নানা কৌশলে চক্রটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত।
সিআইডি প্রধান বলেন, এভাবেই এ চক্র পারিবারিক সমস্যা সমাধানের কথা বলে এক নারী ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ‘দরবেশ বাবা’ পরিচয়ে কয়েক ধাপে তার কাছ থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
পারিবারিক সমস্যায় আক্রান্ত এক নারী চিকিৎসক ফেসবুকে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দেখে প্রতারকদের খপ্পরে পড়েন। বিজ্ঞাপনে দরবেশ বেশধারী নিজেকে মসজিদে নববির ইমাম দাবি করে এক ব্যক্তি বলছেন, তিনি কুরআন হাদিসের আলোকে মানুষের সমস্যা সমাধানে কাজ করেন। বিজ্ঞাপনে দেওয়া মোবাইল নম্বরে ওই নারী তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
অপর প্রান্তে থাকা ‘দরবেশ বাবা’ বেশধারী ব্যক্তি তার সমস্যা জানতে চান। ওই চিকিৎসকের সমস্যার কথা শুনে ‘দরবেশ বাবা’ তাকে বলেন, ‘মা তোমার সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। বাবার ওপর আস্থা রাখ। তোমাকে মা বলে ডাকলাম। আজ থেকে তুমি আমার মেয়ে। তবে কিছু খরচ লাগবে। খরচের কথা কাউকে জানানো যাবে না। জানালে সমস্যার সমাধান তো হবেই না, বরং আরও বাড়বে। এতে তোমার ছেলেমেয়ে ও স্বামীর ক্ষতি হবে।’
গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জানিয়েছে, ২০২০-২১ সাল থেকে তারা এ প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। প্রথমদিকে তারা বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিত। পরে তারা বিভিন্ন চ্যানেলের পাশাপাশি ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করে। সাধারণ মানুষ তাদের মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে সমস্যা সমাধানের নামে এ চক্র ভয়ভীতি ও নানা প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত।