৭ বছর কারাদণ্ড থেকে বাঁচতে আদালতকে ‘বোকা’ বানালেন যুবলীগ নেতা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:১৫ পিএম
প্রতীকী ছবি
মাদক মামলায় সাত বছরের জেল হয় রাজধানীর উত্তরার প্রয়াত হাশেম চেয়ারম্যানের ছেলে নাজমুলের। কাগজ-কলমের তথ্য বলছে, নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে মাত্র ১১ দিন জেল খাটেন তিনি। এর পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আছেন মুক্তাবস্থায়।
অথচ বাস্তব ঘটনা পুরোপুরি ভিন্ন। মূল আসামি নাজমুলের পরিবর্তে বদলি জেল খেটেছেন অন্যজন। এখন আদালতকে ভুল বুঝিয়ে সাত বছরের সাজা থেকেও অব্যাহতি নেওয়ার চেষ্টা করছেন মূল আসামি নাজমুল। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য ধরা পড়েছে যমুনা টেলিভিশনের অনুসন্ধানে।
আরও পড়ুন: যদি বেঁচে থাকি, বড় অফিসার হয়ে দেখা করতে আসবে: আসামিকে হাইকোর্ট
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালে উত্তরার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল ফেনসিডিল ও গাঁজা উদ্ধার করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তাৎক্ষণিকভাবে আনোয়ার হোসেন নামে একজন ধরা পড়ে। তবে পালিয়ে ছিলেন আরেক অভিযুক্ত নাজমুল। পরে অভিযোগ প্রমাণ হলে, আদালতের রায়ে দণ্ডিত হন দুজনই।
আরও পড়ুন: বিএনপি-জামায়াত জোট ভাঙতে আ.লীগের যে পরিকল্পনার কথা জানালেন রনি
পরে আত্মসমর্পণ দেখানো হয় নাজমুলকে। কাগজ-কলমে ১১ দিন জেলেও খাটেন তিনি। তবে প্রকৃতপক্ষে তিনি নন, তার পরিবর্তে জেল খেটেছেন মিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি, যা বেরিয়ে এসেছে যমুনা টেলিভিশনের দীর্ঘ অনুসন্ধানে।
প্রমাণ পাওয়া গেছে, আসামি নাজমুল হাসান আদতে জেলে প্রবেশই করেননি। তার নাম নিয়ে ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট আত্মসমর্পণের পর মৌখিক চুক্তিতে জেল খাটেন মিরাজ। এমনকি তাদের দুজনের বয়সের পার্থক্যও ১০ বছর। নাজমুলের বয়স ৩৩ আর মিরাজের বয়স মাত্র ২৩।
কারাগারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় কারাভোগ করা ব্যক্তির নাম নাজমুল। তার গলার বাম পাশে তিল এবং ডান হাতের পৃষ্ঠে কাটা দাগ আছে। উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। আসলে এসব তথ্যই মিরাজুলের। দুই মাস অনুসন্ধানের পর মিরাজকে ক্যামেরায় কথা বলাতে সক্ষম হয় যমুনা টিভি।
সহজ স্বীকারোক্তি দিয়ে মিরাজ বলেন, ফরিদ নামে একজন তাকে নাজমুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এর পর হয় মৌখিক চুক্তি। প্রলোভোন দেখানো হয়, অঢেল টাকা-পয়সা আর গাড়ি-বাড়ির। এসবের লোভেই নাজমুলের পরিবর্তে জেল খাটেন তিনি।
তবে এসবের কিছুই পায়নি নাজমুল। বদলি জেল খাটার বিনিময় চাইতে গিয়ে উল্টো মামলার শিকার হন আরেক দফা। আবারও জেলে যেতে হয় তাকে।
এ বিষয়ে আসামি নাজমুলের সহযোগী ফরিদকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, মিরাজ নামে কাউকে তিনি চেনেন না। নাজমুলকে চিনলেও তিনি কখনো জেল খেটেছে কিনা এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি ফরিদ।
এদিকে মিরাজ যখন মৌখিক চুক্তির অর্থ পাচ্ছেন না, তখন মাদকের মামলা থেকে নিজেকে পুরোপুরি মুক্ত করতে প্রায় সব আয়োজন শেষ করে এনেছেন নাজমুল। হাইকোর্টে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ রমজান খানের কথাবার্তাও রহস্যজনক।
আইনজীবীকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রতিবেদককে তিনি বলেন, আপনার এগুলো নিয়ে এত কী? এসব তো আপনারা প্রমাণ করতে পারবেন না। সব প্রমাণ রয়েছে জানালে তিনি আরও বলেন, এসব জানলেও লাভ নেই। আসামি বের হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, উত্তরায় জমিদখল, রাজউকের প্লটদখল, জাল-জালিয়াতি ও কিশোর গ্যাং পরিচালনাসহ আরও বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ আছে নাজমুলের বিরুদ্ধে। উত্তরা পশ্চিম ও তুরাগ থানার একাধিক মামলার আসামিও তিনি।
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য নাজমুলের বাসা ও অফিসে গেলেও তিনি দেখা দেননি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি তার।