জিআই স্বীকৃতি পেল হাঁড়িভাঙ্গা আম মন্ডাসহ ৪ পণ্য
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:১৯ পিএম
বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে আরও ৪টি পণ্য। এগুলো হলো-রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর ও আতর এবং মুক্তগাছার মন্ডা। এ নিয়ে দেশে জিআই পণ্যের সংখ্যা দাঁড়াল ২৮টি।
বাংলাদেশে এ কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) ২০০৩ সালে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে একে পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) নামে অভিহিত করা হয়।
২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, পাশ হয়। এর দুই বছর পর ২০১৫ সালে হয় বিধিমালা। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে জামদানি শাড়িকে বাংলাদেশে প্রথম জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর স্বীকৃতি পায় আরও ২০টি পণ্য।
সেগুলো হলো-বাংলাদেশের ইলিশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপতি আম, বিজয়পুরের সাদা মাটি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, রংপুরের শতরঞ্জি, রাজশাহীর সিল্ক, ঢাকাই মসলিন, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি, বাংলাদেশের শীতল পাটি, কালোজিরা, বগুড়ার দই, শেরপুরের তুলশীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম, আশ্বিনা আম, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা।
সম্প্রতি অনুমোদিত তিনটি পণ্য টাঙ্গাইল শাড়ি, নরসিংদীর অমৃতসাগর কলা ও গোপালগঞ্জের রসগোল্লার অনুমোদনের কপি ও জার্নাল রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। এতে জিআই পণ্যের সংখ্যা হয় ২৪টি।
সোমবার নতুন চারটি জিআই পণ্যের জার্নাল প্রকাশিত হওয়ায় মোট পণ্যের সংখ্যা দাঁড়াল ২৮টি। এছাড়া আরও ২টি পণ্য অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেগুলো হলো- জামালপুরের নকশিকাঁথা এবং যশোরের খেজুর গুড়। আগামী সপ্তাহে এই দুটো পণ্যের জার্নাল প্রকাশিত হবে।
মুক্তাগাছার মন্ডার ইতিহাস: মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, আনুমানিক ১৮২৪ সালে রামগোপাল পাল নামে এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম এই মন্ডা তৈরি করেন। তার মন্ডা তৈরি নিয়েও একটি গল্প প্রচলিত আছে।
এক রাতে তিনি স্বপ্নে দেখেন, তার শিয়রে দাঁড়িয়ে এক সন্ন্যাসী মন্ডা বানানোর আদেশ দিচ্ছেন। পরবর্তী কয়েক রাতে স্বপ্নে সেই সন্ন্যাসী তাকে মন্ডা বানানোর পদ্ধতিও শিখিয়ে দেন। শেষ নিয়মটি শেখানোর পর সন্ন্যাসী তাকে আশীর্বাদ করেন এই বলে, ‘মন্ডা বানানোর জন্য একসময় তুই অনেক খ্যাতি অর্জন করবি।’ রামগোপাল পাল মন্ডা বানিয়ে খ্যাতিমান হয়েছিলেন, সে বিষয়ে কারও সন্দেহ নেই।
আগের দিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, পূজাপার্বণ ও বিভিন্ন প্রয়োজনে মুক্তাগাছার জমিদার বাড়িতে প্রচুর মিষ্টির প্রয়োজন হতো। ১৮২৪ সালে তৎকালীন মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর কাছে মন্ডা বানিয়ে পেশ করেন মুক্তাগাছা থানার তারাটী গ্রামের রামগোপাল পাল।
এর স্বাদ জমিদারকে এতই মুগ্ধ করেছিল যে, সেসময় থেকেই মন্ডা জমিদারবাড়িতে স্থায়ী আসন গেড়ে বসে। জমিদারদের খুবই পছন্দের মিষ্টি ছিল এই মন্ডা। তাদের হাত ধরে ক্রমেই উপমহাদেশের সবখানে ছড়িয়ে পড়ে এ মন্ডার খ্যাতি।
বর্তমানে মন্ডা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রমেন্দ্রনাথ পাল অ্যান্ড ব্রাদার্সের কর্ণধার রথীন্দ্রনাথ পাল যুগান্তরকে বলেন, টেলিভিশনে খবরটি দেখলাম। খুব ভালো লাগছে।
তিনি জানান, এই মিষ্টির প্রধান উপকরণ হিসাবে দুধের ছানা ও চিনি বা গুড় ব্যবহার করা হয়। এক কেজি মন্ডা তৈরিতে আধা কেজি চিনি এবং ৭ কেজি দুধের প্রয়োজন পড়ে। চিনি জ্বাল দিয়ে সিরা এবং ৭ কেজি দুধ জ্বালিয়ে ১ কেজি ছানা তৈরি করা হয়। পরে সিরা ও ছানা জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় মন্ডা।