তোমরা কি ঘোড়ার ঘাস কাটো: কর্মকর্তাদের মন্ত্রী
যুগান্তর প্রতিবেদন ও বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৫৫ পিএম
চালকলের মালিকরা (মিল মালিক) শিয়ালের চেয়েও ধূর্ত বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এ সময় তিনি দায়িত্বে অবহেলার জন্য খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের তিরস্কার করে বলেন, তোমরা কি ঘোড়ার ঘাস কাটো!
রোববার দুপুরে বগুড়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণে আয়োজিত এ সভায় মন্ত্রী চালের দাম মাঝে মাঝে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ার পেছনে চাল ব্যবসায়ীদের হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।
এ সময় মিল মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা ভোক্তার কথা ভেবে চালের বাজার স্বাভাবিক রাখুন। এজন্য নতুন আইন হচ্ছে। দু’এক সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদে পাশ হওয়ার পর আইনটি কার্যকর হবে। তখন শুধু জরিমানা নয়, জেলেও যেতে হতে পারে।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সভায় বক্তব্য দেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস, খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন, বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, ডিসি ফুড কাজী সাইফুদ্দিন, শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী, চাল ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ, আমিনুল হক, ফরিদ আহম্মেদ মোল্লা, গোলাম কিবরিয়া, ইঞ্জিনিয়ার কেতাউর রহমান প্রমুখ।
সবার কথা শোনার পর খাদ্যমন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, এবারের নির্বাচনি ইশতেহারে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য না বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। আর এটি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই আমাদের নির্দেশনা দিয়ে মাঠে নামিয়েছে। শপথ নেওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এসময় তিনি উপস্থিত ডিসি ফুডকে বলেন, ইন্সপেক্টর ও অন্য কর্মকর্তারা নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করেন না। সরকারি নির্দেশ পাওয়ার আগে মাঠে নামেননি। তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে চালের বাজার অস্থিতিশীল হতো না। তিনি এ ব্যাপারে আগামী সাতদিনের মধ্যে তাকে অবহিত করতে ডিসি ফুডকে নির্দেশ দেন।
মিল মালিকদের উদ্দেশে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নতুন আইন করা হয়েছে। মিনিকেট বলে কোনো চাল নেই, আপনারা মিনিকেট বলে কোনো চাল বিক্রি করতে পারবেন না। বস্তার ওপর ধানের জাত উলেখ করতে হবে। মিল গেটে কত টাকায় চাল কেনা হয়েছে তা লিখতে হবে। থাকতে হবে উৎপাদনের তারিখও। আপনারা চাল সরু করার নামে পালিশ করে ১৬ থেকে ২০ লাখ টন চাল বাতাসে উড়িয়ে দেন। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয় না। তারা দাম বাড়িয়ে ভোক্তার কাছে আদায় করেন।
চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগ্রাসী ব্যবসার সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ করে মন্ত্রী বলেন, আপনারা চাল উৎপাদন করে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির সময় তাদের চাহিদামতো বস্তার গায়ে প্রতি কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেশি উল্লেখ করেন।
এছাড়া আমাদের কাছে খবর আছে, আড়তদার ও মিল মালিকরা নির্ধারিত গুদামের বাইরে বিভিন্ন এলাকায় গুদাম ভাড়া নিয়ে গোপনে ধান মজুত করছেন। এসব এলাকাতেও অভিযান চলবে।
সভায় কয়েকজন চালকল মালিক দাবি করেন, এ ব্যবসা করতে গিয়ে তারা ক্ষতিগ্রস্ত ও নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
জবাবে মন্ত্রী বলেন, আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হননি। বরং ধান চাল ব্যবসার নামে ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়েছেন। ওই টাকা ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে ঢাকায় ফ্লাট ও এলাকায় একাধিক গাড়ি-বাড়ি করেছেন।
সভায় চালের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা, হাস্কিং, অটো রাইস মিল এবং করপোরেট গ্রুপের মালিক বা প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্যে চালের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একে অন্যকে দায়ী করেন। এদিকে রোববার রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে অভিযান চালিয়ে অনিয়ম পাওয়ায় ৭টি দোকানে ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার তদারকি টিম।