Logo
Logo
×

জাতীয়

মৃত মানুষের ছবি তোলা রাজেস এখন নিজেই ছবি

Icon

মনোজ সরকার

প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:৫০ পিএম

মৃত মানুষের ছবি তোলা রাজেস এখন নিজেই ছবি

কেউ মারা গেলেই ডাক পড়ত রাজেস সেনের। ছবি তুলতেন মৃত মানুষের মুখের, হাতের ও পায়ের পাতার। কখনো ডাক পেয়ে যেতেন শ্মশানে। সেখানেও মৃতদেহের ছবি, এমনকি হাত-পায়ের পাতার ছবি তুলতেন তিনি। কে জানত তিনি নিজেও একদিন ছবি হয়ে যাবেন। তার মুখের, হাতের ও পায়ের ছবি তুলবেন অন্যকেউ।

চল্লিশ বছর ধরে মৃত মানুষের ছবি তোলা সেই রাজেস আর নেই। ২১ জানুয়ারি ভোরে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এ দিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারের রাজেস সেনের বাবার নাম তারকনাথ সেন। খুব ছোট থেকেই ক্যামেরার প্রতি এক অন্যরকম টান ছিল তার। আর এ কারণেই ক্যামেরাকেই পেশা হিসেবে নেন তিনি। তবে তার চলার পথ মোটেই সহজ ছিল না। 

জীবনযাপনের জন্য প্রথমদিকে শাঁখারীবাজারে শঙ্খশিল্পে কাজ করতে হয় তাকে। পরে পুরান ঢাকার একটি হারবাল ওষুধ কারখানায়ও চাকরি করতে হয় তাকে; কিন্তু কোথাও মন টেকেনি তার। ক্যামেরার টানে বারবার ফিরে আসেন তিনি।

অবশেষে সেই পাকিস্তান আমলে আত্মীয়ের হাত ধরে ছবির জগতে প্রবেশ করেন কিশোর রাজেস সেন। তার আত্মীয় অতীন্দ্র বর্মণের একটা স্টুডিও ছিল নিউমার্কেটে। সেখানে যেতেন রাজেস। মুক্তিযুদ্ধের পর অতীন্দ্র বর্মণ ভারতে চলে গেলে পুরান ঢাকার মুন সিনেমা হলের সামনে বারিকুল সেলিমের স্মৃতি স্টুডিওতে যেতেন তিনি। ১৯৭৫ সালে ওই স্টুডিওতে ফটোগ্রাফারের কাজ শুরু করেন। নেশা থেকে পেশা হিসেবে বেছে নেন ফটোগ্রাফি। সেই থেকে তিনি হয়ে ওঠেন ফটোগ্রাফার রাজেস।

স্মৃতি স্টুডিওতে পাঁচ বছর কাজ করেন রাজেস সেন। সেই সময় বেশ কিছু চলচ্চিত্রে স্থিরচিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন। এর মধ্যে আছে ‘হাসু আমার হাসু’, ‘সীমার’, ‘কে তুমি’ ইত্যাদি চলচ্চিত্র। ১৯৮১ সালে লক্ষ্মীবাজারের কণিকা স্টুডিওতে কাজ শুরু করেন রাজেস। তখন থেকে রাজেস মৃত মানুষের ছবি তোলা শুরু করেন। মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ মারা গেলে স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণের জন্য মৃত মানুষের ছবি তুলে বাঁধাই করে রাখার প্রচলন রয়েছে। কেউ শুধু পায়ের পাতার ছবি রাখেন। অনেকে হাতের ছবিটাও তুলে রাখেন।

মৃত মানুষের ছবি তোলার শুরুর দিকে একবার ভয় পেয়েছিলেন রাজেস সেন। একদিন শ্মশানে রাজেস অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। অবশ্য পরে তার ভয় কেটে যায়। মৃত মানুষের ছবি তুলতে তুলতে তিনি নিজেই একদিন ছবি হয়ে যাবেন কোনোদিন কি ভেবেছিলেন তিনি? কখনো কি ভেবেছিলেন একদিন তারই মৃতদেহের ছবি তুলবেন অন্য কেউ?

গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজেস সেন বলেছিলেন, ‘ফটোগ্রাফি আমার নেশা। মরণের আগপর্যন্ত এ নেশা আমি ছাড়তে পারব না। যত দিন সুস্থ আছি, তত দিন ছবি তুলে যাব।’ তার সেই কথা রেখেছেন রাজেস সেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি কাজ করে গেছেন।

রাজেস সেনের ছেলে লোকনাথ সেন বলেন, ২০ জানুয়ারি শাঁখারীবাজারে নাম-সংকীর্তন অনুষ্ঠানে প্রসাদ গ্রহণ শেষে বাড়িতে এসে ঘুমিয়ে পড়েন। মধ্যরাতে অসুস্থতা বোধ করলে রাত ৩টার দিকে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাকে নেওয়া হয় আইসিসিতে; সেখান থেকে লাইফ সাপোর্টে নেন চিকিৎসকরা। অবশেষে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তিনি মারা যান।

রাজেস সেনের জামাতা বিশ্বজিৎ বর্মণ ও শ্যালিকার জামাতা শিমুল সুর জানান, দুপুরের দিকে মরদেহ পোস্তগোলা মহাশ্মশানে নেওয়া হয়। সেখানেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম