দেশে তীব্র ঠান্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কুয়াশাও। সর্বত্রই জেঁকে বসছে শীত। ঘন কুয়াশায় দেখা মিলছে না সূর্যের। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে মঙ্গলবার ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবার বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির পর শীত ও কুয়াশা দুটিই তীব্রভাবে বাড়তে পারে। শীত-কুয়াশায় রাজধানী থেকে গ্রাম সর্বত্রই সাধারণ মানুষকে কাঁপাচ্ছে। হাওড়, বিল, চা বাগানে শীতের তীব্রতা আরও বেশি। ঠান্ডার পাশাপাশি হিমেল হাওয়ার কারণে বিপাকে পড়েন শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষ।
সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল বরিশালে সাড়ে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে ৫-৬ দিন ধরে দিনভর ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের অনুভূতি বয়ে বেড়াচ্ছে।
সোমবারের ন্যায় মঙ্গলবারও রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বেশিরভাগ এলাকায় শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি তাপমাত্রা ছিল। কুয়াশা বেশি থাকায় সৈয়দপুর, রাজশাহী ও সিলেট বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামায় সমস্যা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মঙ্গলবার রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘœ ঘটতে পারে।
আবওহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র বলছে, কাল রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে জানুয়ারিতে দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকাজুড়ে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকছে, যা এক সময় শুধু উত্তরাঞ্চল ও সিলেটে বেশি দেখা যেত। এতে সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়ে গেছে। কুয়াশার দাপটের কারণে সূর্যের আলো ভূমিতে আসতে পারছে না। যার ফলে দিনেও তীব্র শীতে কষ্ট বাড়ছে।
শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার): শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে মঙ্গলবার দেশের সর্বনিু তাপমাত্রা বিরাজ করে। সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
কনকনে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে গোটা জনপদ। ব্যাহত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তীব্র ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী, খেটে খাওয়া মানুষ বাগানের চা শ্রমিকরা। ঘন কুয়াশায় শীতের তীব্রতায় কাবু হয়ে পড়েছে জেলার জনজীবন। ছাড়িদিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফোটার মতো পড়ছে কুয়াশা। এখনো সরকারি বা বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়নি। হাড় কাঁপানো শীতে সর্দি-কাশি, ঠান্ডা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানিসহ শীতজনিত নানা রোগ নিয়ে শিশু এবং বয়স্করা ভর্তি হয়েছেন বিভিন্ন সরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, আগামী ৩দিনের পূর্বাভাস অনুযায়ী তাপমাত্রা আরও কমতে থাকবে। এ এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামীতে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব জানান, উপজেলা প্রশাসন এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৫০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : ভালুকায় শীতের দাপটে হতদরিদ্র, ছিন্নমূল, শিশু, গবাদি পশু কুপোকাত হয়ে পড়েছে। সারা দিনের মাঝে সূর্যের দেখা মেলেনি। কনকনে শীতের পাশাপাশি শৈত্যপ্রবাহ যোগ হওয়ায় শীতের প্রকোপকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষকে খড়কুটা জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায়। ভোরে ঘন কুয়াশা পড়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দূরপাল্লার বাস, ট্রাক ও প্রাইভেটকারগুলো ফগলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে রাস্তায় চলাচল করতে দেখা যায়। কনকনে শীতে নিুআয়ের মানুষ কাজে বের হতে পারছেন না।
ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট শিশু চিকিৎসক ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে অভিভাবকরা শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধদের ঘরের বাইরে না বের হওয়া এবং সব সময় গরম কাপড় পরার জন্য।
বগুড়া: হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জনগণ বিশেষ করে নিু আয়ের ও ছিন্নমূলদের দুর্ভোগ বেড়েছে। মঙ্গলবার জেলায় মৌসুমের সর্বনিু তাপমাত্রা ১০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বগুড়ায় গত কয়েকদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘন কুশায়া ও হিমেল হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
সড়ক বিভাজন, ফুটপাত, স্টেশন ও খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া ছিন্নমূল এবং নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। জনগণ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। অনেকে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের কারণে রাস্তায় জনগণের উপস্থিতি কমে গেছে। ভোরে ঘন কুয়াশা থাকায় সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহনগুলো ফগ বা হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। প্রচণ্ড শীতের কারণে খেটে খাওয়া মানুষগুলো ঠিকমতো কাজ পাচ্ছেন না। এতে পরিবার নিয়ে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
আবার শীতের কারণে শীতজনিত রোগ বাড়ছে। গত ১৫ দিনে সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিভিন্ন বয়সের এক হাজার মানুষ শীতজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা চিকিৎসা নিয়েছেন। শীতের কাপড়ের দোকানে ভিড় বেড়েছে।
বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চপর্যবেক্ষক সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া মামুন জানান, মঙ্গলবার জেলায় সর্বনিু তাপমাত্রা ১০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ ১৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আগেরদিন সর্বনিু ১১.৪ ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ ১৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। তিনি আরও জানান, ১৯ বা ২০ জানুয়ারি জেলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হতে পারে। আর বৃষ্টি হলে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে।