Logo
Logo
×

জাতীয়

শেকড় থেকে শিখরে নানক

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:৪২ পিএম

শেকড় থেকে শিখরে নানক

জাহাঙ্গীর কবির নানকের সেই কান্না আজও ভুলার কথা নয় রাজধানীর মোহাম্মদপুর-আদাবরের বাসিন্দারের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন হারিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

নানকের পাশাপাশি তার কর্মীরাও কেঁদেছিলেন সেদিন। কর্মীরা তার গাড়ি আটকে রেখে সে সময় অঝোরে কান্না করেন। নানকসহ তাদের এ কান্না সাধারণ মানুষের মন ছুঁয়ে যায়।

তবে নানক হাল ছাড়েননি। মন্ত্রিত্ব-এমপিত্ব হারিয়ে পরের পাঁচ বছর রাজপথে ছিলেন। দলের হয়ে গুরু দায়িত্ব পালন করে আবারও দলীয় প্রধানের আস্থাভাজনে পরিণত হন। 

আর তাই চব্বিশের ভোটে তাকে একই পথে হাঁটতে হলো না। ফিরে পেলেন নৌকা প্রতীক। তাতে হাসি ফিরে পেলেন তার কর্মীরা। এবার শুধু সংসদ সদস্যই নির্বাচিত হননি নানক, জায়গা করে নিয়েছেন মন্ত্রিসভাতেও।  

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিছুদিন পর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবির নানক। সর্বশেষ কাউন্সিলে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৯ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে কজন হাতে গোনা নেতা শেকড় থেকে শিখরে উঠেছেন তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক অন্যতম। 

জাহাঙ্গীর কবির নানক শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত, আস্থাভাজন এবং অনুগত নেতা হিসেবে পরিচিত। নানক রাজনীতিতে দীর্ঘ ত্যাগ স্বীকার করেছেন, জেল খেটেছেন, নির্যাতন ভোগ করেছেন। পঁচাত্তর পরবর্তীতে যারা ত্যাগী রাজনীতিবিদ তার মধ্যে নানক অন্যতম।

বিশ্বস্ততার ফলস্বরুপ তাকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য করেছেন শেখ হাসিনা। দলের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়। বিরোধী দলীয় আন্দোলন সংগ্রাম দমনে তাকে কাজে লাগানো হয়। 

জাহাঙ্গীর কবির নানকের জন্ম ১৪ই জানুয়ারি ১৯৫৪ সালে। তার পৈতৃক বাড়ি বরিশাল জেলার সদর উপজেলার খিরদ মুখার্জী লেন এলাকায়। তিনি আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

পঁচাত্তরের পর যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি আওয়ামী লীগের হাল ধরতে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন তখন জাহাঙ্গীর কবির নানককে তিনি আস্থায় নেন। বরিশাল থেকে নিয়ে এসে তার উপর ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়। 

ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার পরও জাহাঙ্গীর কবির নানক পরবর্তীতে যুবলীগের নেতৃত্বও গ্রহণ করেন। আর এই নেতৃত্বের ধারায় তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছিলেন।

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংকটে তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছিলেন। বিশেষ করে ২০০১ সালের আওয়ামী লীগের বিপর্যয়ের পর যেভাবে আওয়ামী লীগকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে যুবলীগ সাহায্য করেছিল সেটি অসাধারণ এবং অনন্য। 

কিন্তু ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেন আসার পর তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যান এবং এটিই তার রাজনৈতিক জীবনের একটি নেতিবাচক দিক বলে অনেকে মনে করেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রথমবারের মত এমপি হয়েছিলেন মোহাম্মদপুর আসন (ঢাকা-১৩) থেকে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। এরপর নতুন মন্ত্রিসভাতেও নাম এসেছে তার। দলের বিভিন্ন কঠিন সময়ে চমক দেখিয়েছেন নানক, এবার মন্ত্রিসভাতেও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় নিয়ে কি চমক দেখাবেন তিনি?  
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম