ইউপি চেয়ারম্যান থেকে দেশের ‘এক নম্বর’ মন্ত্রী
সরকার আব্দুল আলীম, কালিয়াকৈর (গাজীপুর)
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:১৬ পিএম
আ ক ম মোজাম্মেল হক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। এবারো তিনি মন্ত্রিসভায় ডাক পেয়েছেন। এর আগে তিনি দুই মেয়াদে ১০ বছর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই আ ক ম মোজাম্মেল হক সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি ১ মেয়াদে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও দুই মেয়াদে সহ-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি গাজীপুর মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হন।
১৯৭৬ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৬ বছর তিনি গাজীপুর জেলা শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। আর জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন ৪৯ বছর ধরে। আর দুই বছর পার হলেই সম্রাট আকবরের সমান হবে প্রতিনিধিত্বের সময়কাল। আজ পর্যন্ত কেউ এ রেকর্ড ভাঙতে পারেনি।
আ ক ম মোজাম্মেল হক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ গাজীপুরে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে তিনি সশস্ত্র প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেবের বিরুদ্ধে সম্মুখে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।
পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার পরিচালনায় তিনি বিশেষ দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন।
১৯৭৩ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। ১৯৮৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চারবার গাজীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচিত হন। বহুবার তিনি দেশের শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ১৯৯৬ ও ২০০৩ সালে শ্রেষ্ঠ পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ঢাকা সদর উত্তর মহকুমার কার্যালয় গাজীপুরে স্থানান্তরিত করা ও পরবর্তীতে গাজীপুর জেলা বাস্তবায়নে মূলত একক দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৮ সালে পৌর মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করে গাজীপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচন প্রত্যাহার করায় তিনি এককভাবে বিজয় লাভ করেন। এবার ২০২৪ সালে তিনি সংসদ সদস্য বিজয়ী হয়েছেন।
আ ক ম মোজাম্মেল হক শিক্ষা ও সমাজ সেবামূলক অসংখ্য কর্মকাণ্ডে জড়িত আছেন। তিনি সরকারি সফরে এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের বহু দেশে ভ্রমণ করেছেন।
তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্যা ছাড়া দেশের আপামর জনতার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন বরাদ্দ ও উন্নয়ন কাজের উদ্বোধনসহ নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান। আবার মন্ত্রিপরিষদে, সংসদে, দেশে-বিদেশে নানা কর্মসূচিতে অংশ নেন। নানা অনুষ্ঠানে দেওয়া তার বক্তব্য বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ও বিভিন্ন মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়।
গত করোনার সময় সবাই ঘরে বসে থাকলেও মন্ত্রী বসে ছিলেন না। এ সময় তার সহধর্মিণী না ফেরার দেশে চলে যান। তারপরও তিন দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সারা বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় কালিয়াকৈরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
কালিয়াকৈরে রাস্তা ঘাট, মসজিদ, মন্দির, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচুর বরাদ্দ দিয়ে উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মান করা হয়েছে। তার তত্ত্বাবধানে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি অফিসগুলোতে তার নির্দেশনায় ব্যাপক কাজ হচ্ছে।
শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উন্নয়নের মহাপরিকল্পনায় পাল্টে যাচ্ছে শতবর্ষী প্রাচীনতম গ্রাম কালিয়াকৈর এখন শহর। শিক্ষা, সংস্কৃতি, কর্মসংস্থান, রাস্তা-ঘাট, নিরাপদ পানি সরবরাহ, অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রেই অবিশ্বাস্য উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে শিল্পসমৃদ্ধ কালিয়াকৈর শহরটি। ২০০১ সালে কালিয়াকৈর পৌরসভার যাত্রা। এটা এখন দেশের ১ম শ্রেণির পৌরসভা। উপজেলা ও পৌরসভায় বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে উঠায় এখানে লাখ। লাখ মানুষের বসবাস।
এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি থাকলেও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের দেখা মেলেনি তখন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দৃশ্যপট পাল্টে যেতে শুরু করে। দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উন্নয়নের মহাপরিকল্পনায় বদলে যেতে থাকে শতবর্ষী প্রাচীনতম শহরটি। বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু হাইটেক রেলস্টেশন, মেট্রোরেল চলাচল, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ফোরলেনে উন্নীত, ফ্লাইওভার, ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস নির্মাণ, ধামরাই-কালিয়াকৈর সড়ক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোসহ বিভিন্ন বড় প্রকল্পের উন্নয়নের চিত্র দৃশ্যপট।