Logo
Logo
×

জাতীয়

হেভিওয়েট হেভিওয়েট লড়াই, যেসব আসনে দৃষ্টি সবার

Icon

নাদির হোসেন সবুজ

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:২১ পিএম

হেভিওয়েট হেভিওয়েট লড়াই, যেসব আসনে দৃষ্টি সবার

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচার শেষ। আগামীকাল সকাল ৮টায় শুরু হবে ভোটগ্রহণ। এই নির্বাচনে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিসহ বহু নিবন্ধিত দল অংশ নিচ্ছে না। 

ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের আধিপত্যে অনেকটা নিরুত্তাপ এই ভোটেও নজর কাড়ছে অন্তত ২০-৩০টি সংসদীয় আসন। ওই সব আসনে লড়ছেন বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী। আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টি, আবার কোনো কোনোটিতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন নৌকার প্রার্থীদেরকে।

বেশ কয়েকটি আসনে দেখা যাচ্ছে হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ। সেখানে সঠিক ভোট হলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এসব আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেও জয়ের নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না হেভিওয়েট আওয়ামী লীগ নেতারা। বিরোধী দলের প্রার্থী এবং রাজনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞ ও তরুণ রাজনীতিকরা তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তাদেরকে। 

জানা গেছে, নৌকার প্রার্থীর বাইরে থাকা হেভিওয়েট কিছু প্রার্থীকে নির্বাচনি তরী পার করতে কাজ করছেন দায়িত্বশীলরা। এসব প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও কাজ করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কে কে তাদের স্থান ধরে রাখতে পারবেন সেটি জানা যাবে রোববার।

কাজী জাফরউল্লাহ-নিক্সন
ফরিদপুর-৪ আসনে মানুষের আগ্রহ, কৌতূহল ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন নৌকা প্রতীকের কাজী জাফর উল্লাহ ও ঈগল প্রতীকের মজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন। মূল লড়াইটা হচ্ছে— এ দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যেই। আর সে কারণে অন্যান্য দল বা জোটের প্রার্থীদের মাঠে প্রায় দেখা যাচ্ছে না। নিক্সন চোধুরী ও কাজী জাফর উল্লাহ তৃতীয়বারের মতো ফরিদপুর-৪ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুখোমুখি হয়েছেন। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয় পান নিক্সন চৌধুরী। রোববার ভোটারই নির্ধারণ করবেন নিক্সন চৌধুরী তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়ে হ্যাটট্রিক বিজয় করবেন নাকি কাজী জাফর উল্লাহ হ্যাটট্রিক পরাজয় এড়াতে জয়ের স্বাদ নেবেন।

সালমা ইসলাম-সালমান এফ রহমান
ঢাকা-১ আসনে (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসন থেকে লড়ছেন ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের দুই হেভিওয়ের প্রার্থী। এ আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ভোট করছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি। নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। 

সালমা ইসলাম তিনবার সংসদ সদস্য হয়ে দোহার-নবাবগঞ্জ এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। নির্বাচনি প্রচারেও ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন তিনি। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ ভোটারের মধ্যে সালমা ইসলামের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। ভোটাররা বলছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে সালমা ইসলাম জয়ী হবেন। 

শেষ পর্যন্ত এই আসনে লাঙ্গল, নাকি নৌকা জিতবে তা দেখতে দোহার-নবাবগঞ্জবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে রোববার রাত পর্যন্ত।

শমসের-নাহিদ
সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে সোনালি আঁশ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ (নৌকা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেনের (ঈগল) পক্ষে দুটি পক্ষ সরব। এ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থাকলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ শমসেরের প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। তবে শমসের মবিনের জিতে আসা কঠিন হবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

সবুজ-রুমানা
গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর ও গাজীপুর সদরের আংশিক) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ। তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রুমানা আলী। নির্বাচন প্রচারণায় বেশ কয়েকটি হামলার কথা শোনা গেছে ওই আসনে। এখন দেখার বিষয় এই আসন থেকে কে শেষ পর্যন্ত জয়ের মালা পরে।

চুমকি-আখতার
গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ উপজেলা, পুবাইল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আংশিক ও বাড়িয়া) আসনে ভোটের কঠিন হিসাব-নিকাশে আছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারউজ্জামান ও তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেহের আফরোজ চুমকি। বাকিরা কাগজ-কলমে প্রার্থী থাকলেও বেশিরভাগ প্রার্থী নেই প্রচারে। নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় আছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাকসুর সাবেক দুবারের জিএস ও ভিপি, জেলা পরিষদের সাবেক দুবারের চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য আখতারউজ্জামান ট্রাক প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

সৈয়দ ইবরাহিম-জাফর
কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালাহউদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে গেছেন। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

মঞ্জু-মহারাজ
মহাজোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নৌকা প্রতীকে লড়ছেন পিরোজপুর-২ (কাউখালী, ভাণ্ডারিয়া ও নেছারাবাদ) আসনে। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশা করছেন স্থানীয়রা।

গোলাম দস্তগীর-তৈমুর
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার লড়ছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীকের বিরুদ্ধে। এলাকায় গাজীর শক্ত অবস্থান থাকায় তৈমূরের জয় সহজ হবে না। এ ছাড়া এই আসনে তৈমূর ও গোলাম দস্তগীরের শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়া।

ইনু-কামরুল
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর ও ভেড়ামারা) আসনে। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করা কামরুল আরেফিন। আওয়ামী লীগের গুটিকয় নেতা ইনুকে সমর্থন দিলেও তার ভোটের মাঠে জিতে আসা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

রাশেদ-মনিরুল
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে। ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম এবং আওয়ামী লীগ নেতা ফাইয়াজুল হক রাজু। তৃণমূলের কর্মীদের বড় অংশ এ দুজনের সঙ্গে। ফলে মেননকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে ভোটের মাঠে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম