নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন বই পেয়ে যেমন উচ্ছ্বসিত হয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা, তেমনি বই না পেয়ে মন খারাপ করে বাসায় ফিরে গেছে-এমন চিত্রও দেখা গেছে।
সোমবার সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বই উৎসবের আয়োজন করা হয়। তবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে আংশিক বই নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। আবার কোনো কোনো শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই-ই পায়নি।
এ বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে প্রায় ৩১ কোটি বই বিতরণ করার কথা। কিন্তু মাধ্যমিকের ৮ম ও ৯ম শ্রেণির ৩০ শতাংশ বই এখনো ছাপাই শেষ হয়নি।
এদিকে নতুন বই বিতরণ উপলক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় রাজধানীর মিরপুর ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত। এ সময় শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য বই উৎসবের স্থান ঠিক করা হয় কুমিল্লার লালমাই উপজেলার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দিয়েও বাস্তবায়ন করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের বলেন, মাধ্যমিকের কেন্দ্রীয় কোনো প্রোগ্রাম করা হয়নি। স্কুলগুলোকেই বই উৎসব করার জন্য বলা হয়েছে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রায় ৩১ কোটি বই ছাপার কাজ করছে এনসিটিবি। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরের মোট বই প্রায় ৯ কোটি ৭৫ লাখ। আর মাধ্যমিক স্তরের মোট বই ১৮ কোটি ৬১ লাখ ১ হাজার ২০৬টি।
এর মধ্যে অষ্টম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১ কপি এবং নবম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩ কপি বই দেওয়ার কথা রয়েছে।
বই বিতরণ উপলক্ষ্যে মিরপুরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, নতুন বই শিশুদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নতুন বছরের উপহার। নতুন বই শিশুকে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করে। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ শিশুকে বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করে। বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা শিশুর মনোজগতে বিস্ময় তৈরি করে। শিশুমনের এ আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে বই বিতরণের সূচনা। সময়ের পরিক্রমায় এটি এখন বই উৎসবে পরিণত হয়েছে।
দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ, মতিঝিল সরকারি বালক-বালিকা বিদ্যালয়, আজিমপুর সরকারি গার্লস স্কুল ও কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ নামি-দামি সব প্রতিষ্ঠানেই নতুন বই বিতরণ করতে দেখা গেছে। তবে সব শিক্ষার্থীকে শতভাগ বা পুরো সেট বই দেওয়া হয়নি বলে জানা যায়।
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে কেবল বাংলা ভার্সনে কিছু কিছু বই দেওয়া হয়েছে। ইংরেজি ভার্সনের বই দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া এই প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনি কেন্দ্র পড়ায় সব শিক্ষার্থীকে বই উৎসব করে বই দিতে পারেনি।
বাংলাদেশ মুদ্রণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, নতুন বছরের শুরুতে অষ্টম ও নবম শ্রেণির ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী বই পাবে না। ফেব্রুয়ারিতে এই বই পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বছর নতুন শিক্ষাক্রমে বইয়ের সফট কপি ও ডামি তৈরি করতে দেরি হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, প্রাথমিকের সব বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে গেছে। তবে অষ্টম ও নবম শ্রেণির নতুন কারিকুলামের কিছু বই এখনো ছাপা শেষ হয়নি। তবে খুব দ্রুত এই বই পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।