আমেরিকান নাগরিককে বিয়ে, চাপে দেশ ছাড়লেন তরুণী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:৪৭ এএম
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আমেরিকান নাগরিককে বিয়ে করায় চাপের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন খাইরুন আজরান আজিমা নামের এক তরুণী। দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। বিপাকে পড়েছেন ওই তরুণীর পরিবার। পরিবারের সদস্যদের দেখানো হচ্ছে ভয়-ভীতি। দেওয়া হচ্ছে নানা ধরনের হুমকি। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি রাজধানীর রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন আজিমার বাবা আবুল কালাম আজাদ। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
গত ২৩ ডিসেম্বর করা জিডিতে আবুল কালাম আজাদ উল্লেখ করেন, আমার মেয়ে চার বছর আগে খ্রিস্টান ধর্মের এক ছেলেকে বিয়ে করে। এরপর থেকে অজ্ঞাত নম্বর থেকে আমার মোবাইলে বিভিন্ন সময় ফোন করে হুমকি দিত এবং ভয়-ভীতি দেখাত। যখন ফোন করত তখন আমার মোবাইল ফোনে ‘নো নম্বর’ আসত। এ কারণে মোবাইল নম্বরটি চিহ্নিত করতে পারিনি।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ধর্মীয় নেতাদের চাপের মুখে আমার মেয়ে গত ১৪ নভেম্বর আমেরিকা চলে যেতে বাধ্য হয়। এরপরও হুমকি অব্যাহত থাকে। গত ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনজন লোক আমার বাসায় আসেন। তারা আমার মেয়েকে তাদের হাতে তুলে দিতে বলেন। অন্যথায় আমার এবং পরিবারের সদস্যদের বড় ক্ষতি করবে বলে হুমকি দেন। অজ্ঞাত নামাদের হুমকি অব্যাহত আছে।
আজিমার মা শামসুন্নাহার বলেন, ২০১৮ সালে আমার মেয়ের বিয়ে হলেও, শুরুতে অনেকটা গোপন ছিল। পরে জানাজানি হলে একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতারা ফতোয়া জারি করে, ‘আজিমা এলাকায় বসবাস করতে পারবে না। দোকানপাটে যেতে পারবে না।’ এই ফতোয়া জারির পর আজিমা বাসার বাইরে বের হলেই নানা ধরনের হয়রানির শিকার হয়। গত মার্চে তাকে বহনকারী গাড়িতে হামলাও চালানো হয়। ওই ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যায়। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হলেও তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
আজিমার পারিবারিক সূত্র জানায়, খ্রিস্টান ছেলেকে বিয়ের পর থেকে আত্মীয়-স্বজনের হাতেও নাজেহাল হতে থাকেন আজিমা। মসজিদের মাইকে সতর্ক করে তাকে এলাকা এমনকি দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ হুমকি পাওয়ার পর আজিমা তার স্বামীকে নিয়ে ভ্রমণ ভিসায় বিভিন্ন দেশ ঘুরতে থাকেন। এক পর্যায়ে আমেরিকায় চলে যেতে বাধ্য হন। এখন হুমকিদাতারা বলছেন, ‘তোমার মেয়েকে আমাদের সামনে এনে দাও। আমরা তার বিচার করব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া বলেন, এ সংক্রান্ত জিডির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে এসআই সহিদুল ওসমান মাসুমকে। তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন।
এসআই সহিদুল ওসমান মাসুম যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের অনুমতির জন্য বুধবার আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আশা করছি, বৃহস্পতিবার আদালতের অনুমতি পাব। এরপরই তদন্ত শুরু করব।