সারা দেশে ফের বেড়েছে লোডশেডিং। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বেড়েছে গ্যাসের চাহিদা। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন কমে গেছে। ফলে ঢাকার বাইরে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছে না।
দেশব্যাপী চলছে নির্বাচনি প্রচারণা। মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের অধিকাংশরাই এখন গ্রামে অবস্থান করছেন। এ কারণে আ.লীগের হেভিওয়েট মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের আসনে দিনে-রাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হচ্ছে। এর ফলে কিছু কিছু এলাকার চাহিদা কাট করে ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। ঢাকার উত্তরাসহ কিছু কিছু এলাকায়ও প্রতিদিন লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।
তবে ঢাকার বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো লোডশেডিংয়ের খবর মানতে নারাজ। ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) বলেছে, মাঝে মাঝে টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে উত্তরা, মিরপুরসহ তাদের কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে তাদের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান যুগান্তরকে বলেন, তাদের চাহিদা এখন অনেক কম। এখন তারা পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। তবে রাতে যেসব এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণা চলে সেখানে লোড বেড়ে গেলে মাঝে মাঝে লাইন ট্রিপের আশঙ্কা থাকে। এ কারণে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করে লাইন বন্ধ করে দিতে হয়। তবে তিনি বলেছেন, এনএলডিসি থেকে বিদ্যুৎ কম পাওয়া গেলে লোডশেডিং করতে হতে পারে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
তাদের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের কোনো লোডশেডিং নেই। উলটো প্রতিদিন চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুর ১২টার সময় কোনো লোডশেডিং ছিল না। ওই সময় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৯ হাজার মেগাওয়াট; উৎপাদন হয় ৯ হাজার ১৪১ মেগাওয়াট। আর সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে চাহিদা ১০ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদন ১০ হাজার ২০৩ মেগাওয়াট।
তবে সরকারের এই হিসাব মানতে নারাজ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা। তাদের বক্তব্য বর্তমানে সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১১ থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পিজিসিবি মূলত উৎপাদনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চাহিদা তৈরি করে প্রকাশ করে, যার কারণে বাস্তবতার সঙ্গে তাদের তথ্যের মধ্যে বড় গরমিল রয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি আরইবি। প্রতিষ্ঠানটি গ্রামাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিতরণ করে। আরইবির বিতরণ এলাকায় এখন সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। প্রতিদিন দিনের বেলায় আরইবির লোডশেডিং ছিল এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি।
আরইবির একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশব্যাপী নির্বাচনি প্রচারণা বাড়ার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা আগের তুলনায় কিছুটা বেড়ে গেছে। কিন্তু আমরা সেই তুলনায় বিদ্যুতের বরাদ্দ পাচ্ছি না। তাই লোডশেডিং করতে হচ্ছে।