Logo
Logo
×

জাতীয়

শীতে বাড়ছে অগ্নিদুর্ঘটনা, পোড়া রোগীদের ৭০ ভাগই নারী ও শিশু

Icon

জাহিদ হাসান 

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:১৫ এএম

শীতে বাড়ছে অগ্নিদুর্ঘটনা, পোড়া রোগীদের ৭০ ভাগই নারী ও শিশু

ছোট বোনের নবজাতক সন্তানকে দেখতে রাজধানীর বাসাবো থেকে দেড় বছর বয়সি মেয়ে আয়শাকে নিয়ে কুমিল্লার মুরাদনগরে বাবার বাড়ি যান জান্নাত আরা। তীব্র শীতে বোনের নবজাতক সন্তানকে একটু উষ্ণতা দিতে ৩০ নভেম্বর সকালে চুলার আগুনে সেঁক দিচ্ছিলেন তিনি।

মায়ের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল আয়শা। হঠাৎ ভারসাম্য হারিয়ে চুলার ওপর পড়ে যায় সে। আগুনে তার বাম হাতের কবজি পর্যন্ত পুড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে মেয়েকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাব্যবস্থা ছিল না।

পরদিন তাকে আনা হয় ঢাকায়। এরপর থেকে সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন।

জান্নাত আরা যুগান্তরকে বলেন, প্রায় এক মাস হতে চলছে, কিন্তু মেয়ের পোড়া হাতের তেমন উন্নতি হচ্ছে না। অল্প বয়স। ও হাসপাতালে থাকতে চায় না। কবে হাত ভালো হবে জানি না।

প্রকৃতিতে শীত মৌসুম শুরুর পর বিভিন্নভাবে অগ্নিদুর্ঘটনা ও পোড়া রোগী বাড়ছে। যাদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। একটু উষ্ণতার জন্য শীত তাড়াতে আগুনের অসতর্কতামূলক ব্যবহারে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে।

রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা যুগান্তরকে জানান, অধিকাংশ পোড়া রোগীর শারীরিক সমস্যা জীবনভর বয়ে বেড়াতে হয়। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাও ভিন্ন। দগ্ধের ধরন ও মাত্রাভেদে টানা দুই বছরও চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হয়। টিমওয়ার্কভিত্তিক চিকিৎসা লাগে। তবে এখনো উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে পোড়া রোগীদের সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা দগ্ধ ব্যক্তিদের ৫০ ভাগই গোল্ডেন আওয়ারের মধ্যে (দুর্ঘটনার প্রথম ২৪ ঘণ্টা) হাসপাতালে ভর্তি হতে ব্যর্থ হয়। এতে শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি বেড়ে যায়। এ কারণে গরম পানি, গ্যাসের চুলা ব্যবহার ও আগুন পোহাতে সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, দেশে প্রতি বছর বিভিন্নভাবে প্রায় আট লাখ মানুষ অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের একাধিক চিকিৎসক যুগান্তরকে জানান, অগ্নিদুর্ঘটনাগুলো নানা রকম হয়ে থাকে। প্রথমত দেশের মানুষ স্ক্যাল্ড বার্ন তথা গরম পানি, গরম তেল বা গরম কোনো তরল পদার্থ দ্বারা দগ্ধ হয় বেশি। দ্বিতীয়ত, ইলেকট্রিক বার্ন অর্থাৎ বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট। তৃতীয়ত, ফ্লেম বার্ন তথা সরাসরি আগুনের সংস্পর্শে দগ্ধ হওয়া। যেমন-মোমবাতি, কোরোসিন বাতি, চুলা বা পরিধেয় বস্ত্রে আগুন লাগা। চতুর্থত, কেমিক্যাল বার্ন তথা দাহ্য পদার্থ জাতীয় রাসায়নিকে পুড়ে যাওয়া।

ঢামেক বার্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. বিধান সরকার যুগান্তরকে বলেন, এই ইউনিটে ৩০০ শয্যা রয়েছে। বর্তমানে গড়ে ৩০০ এর উপরে রোগী ভর্তি থাকছে। শীতের আগে এই হার ছিল ২০০ থেকে ২৫০ জন। এখন বার্ন ইউনিটের (বিভাগ) ওয়ার্ড ছাড়াও বারান্দার বিছানায় রোগী আছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী আসছে। এখানে যারা আসে তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. তরিকুল ইসলাম বলেন, বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে প্রতিদিন ৫০ জনের বেশি এবং বহির্বিভাগে ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। আন্তঃবিভাগে অন্তত ৫০০ রোগী ভর্তি থাকছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের প্রায় ৭০ শতাংশই শিশু ও নারী। যাদের বেশর ভাগই ঢাকার আশপাশের বাসিন্দা।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে অনেক দগ্ধ রোগী আসছে যারা দরজা জানালা বন্ধ রেখেই গ্যাসের চুলা জ্বালাতে গিয়ে অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার হন। অনেকে পানি ও খাবার গরম করতে গিয়ে শরীরে ফেলছে। বাসার গ্যাস সরবরাহ লাইনে লিকেজ বা সিলিন্ডার বিস্ফোরণেও দগ্ধ হয়ে আসছে। অনেকের গায়ের পোশাকে আগুন লেগেও দগ্ধ হচ্ছেন।

জানা যায়, শীত শুরুর পর অক্টোবরে বার্ন ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে পাঁচ হাজার একজন এবং জরুরি বিভাগে ৯৮২ জন চিকিৎসা নিয়েছে। নভেম্বরে বহির্বিভাগে চার হাজার ৪৮১ জন এবং জরুরি বিভাগে ৮১০ জন চিকিৎসা নিয়েছে। গত বছরের এই সময়ে রোগীর চাপ আরও বেশি ছিল। এবার হরতাল-অবরোধের কারণে হাসপাতালে পৌঁছানো রোগীর সংখ্যা কম বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ও জাতীয় কো-অর্ডিনেটর ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। সারা জীবন এ কথা বলতে বলতে ক্লান্ত। তিনি বলেন, আগুন, বিদ্যুৎ, গ্যাসের ব্যবহারে সর্বোচ্চ সচেতনতা অবলম্বন উচিত। গরম পানি পাতিল বা ডেকচির পরিবর্তে বালতিতে বহন করা উচিত। সচেতনতা বাড়াতে সরকার, গণমাধ্যম, চিকিৎসক এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে কাজ করতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম