Logo
Logo
×

জাতীয়

দূতাবাসের নথি নিয়ে সন্দেহ, কাল ইসিতে শুনানি

ফরিদপুর-৩: শামীমের দ্বৈত নাগরিকত্বের তথ্য চেয়ে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা ইসির

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:২০ পিএম

ফরিদপুর-৩: শামীমের দ্বৈত নাগরিকত্বের তথ্য চেয়ে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা ইসির

শামীম হক ও প্রতিদ্বন্দ্বী এ কে আজাদ। ফাইল ছবি

ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হকের বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ উঠেছে। তিনি একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের নাগরিক বলে শোনা যাচ্ছে। তবে শামীম হকের দাবি তিনি নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। বিদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করার তথ্যপ্রমাণ নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছেন বলেও দাবি শামীমের।

শামীম হকের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে দূতাবাসের তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে আগামীকাল শুক্রবার নির্বাচন ভবনে শুনানি হবে। সেখানে শামীমের ভাগ্য নির্ধারণ হবে। শামীম হক দ্বৈত নাগরিক ইসিতে প্রমাণ হলে আইন অনুযায়ী তার প্রার্থিতা বাতিল হবে।   

শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ত্যাগ করার যে নথিপত্র জমা দিয়েছেন, তা পর্যালোচনা করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী একে আজাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান। তিনি বলেন, যে নথিগুলো শামীম হক জমা দিয়েছেন, তার সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তার নাগরিকত্বের অবস্থা জানতে আপিল মুলতবি করে ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।

আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, শামীম হকের নথিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সেখানে ঢাকায় ডাচ দূতাবাসের কনস্যুলার সেবার ঠিকানা, দূতাবাসের লোগো, ফোন নম্বর, ই-মেইল ও ওয়েবসাইটের ঠিকানা ব্যবহার করেছেন জালিয়াতি করে। 

একে আজাদের আইনজীবী আরও বলেন, নথিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শামীম হকের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় যে ই-মেইল করা হয়েছে, তা করেছেন আলী আজগর মানিক নামের এক ব্যক্তি। মানিকের এইচসিএইচ আন্ডারস্কোর বিডি অ্যাট ইয়াহু ডটকম (hch_bd@yahoo.com) ঠিকানা থেকে করা ই-মেইলে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসে যোগাযোগ করে শামীম হকের নাগরিকত্ব বাতিলের আবেদনটি বারবার তুলে ধরা হয়েছে। সেই ই-মেইলে ঢাকায় নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের কনস্যুলার সেবার ঠিকানা, দূতাবাসের লোগো, ফোন নম্বর, ই-মেইল ও ওয়েবসাইটের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। 

আইনজীবী আরও জানান, মানিকের ওই ই-মেইলটিতে খুঁজে পাওয়া যায় হল্যান্ড চিলড্রেন হাউস নামে একটি এতিমখানার ঠিকানা। সেখান থেকে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় আলী আজগর মানিকের।

এ কে আজাদের আইনজীবী মানিকের কাছে তার পেশা নিয়ে জানতে চান। জবাবে মানিক বলেন, ‘আমি ডাচ দূতাবাসে কাজ করব কেন? আমাদের দূতাবাসের সঙ্গে কিছু প্রকল্প রয়েছে, যেমন– হল্যান্ড চিলড্রেন হাউস। এর ফলে দূতাবাসের সঙ্গে ই-মেইলে আমাদের যোগাযোগ হয়। আমি দূতাবাসের কোনো পদে নেই।’

ইসিতে জমা দেওয়া নথিতে ঢাকার নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের কনস্যুলার সেবার ঠিকানা, দূতাবাসের লোগো ব্যবহার করার কারণ জানতে চাইলে মানিক জানান, আমাদের হল্যান্ড চিলড্রেন হাউসে দূতাবাসের কূটনীতিকসহ রাষ্ট্রদূত একাধিকবার এসেছেন। সে কারণে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। তবে দূতাবাসের কোনো কিছু ব্যবহার করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

শামীম হকের নাগরিকত্ব নেদারল্যান্ডস বাতিল করেছে কিনা—এমন প্রশ্নে মানিক বলেন, বাতিল হতে ১০-১১ মাস সময় লাগে। 

এদিকে শামীম হক ইসিতে দাবি করেছেন, তিনি গত ৯ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ত্যাগ করার আবেদন করেছেন। সেই আবেদন কার কাছে করা হয়েছে, তা নথিতে উল্লেখ নেই। সেই সঙ্গে নথি অনুযায়ী নাগরিকত্ব ত্যাগের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার দূতাবাস থেকে ফিরতি ই-মেইলে ‘হল্যান্ড পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের’ নির্দেশনার জন্য অপেক্ষার কথা জানানো হয়। ‘হল্যান্ড পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়’ বলে কিছু নেই। 

নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ত্যাগ করার আবেদন করা নথি দূতাবাসসহ দায়িত্বশীল কারও গ্রহণ করার কোনো প্রমাণও নেই।

দূতাবাসের নাম ব্যবহার করে মানিককে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগের নির্দেশনা কে দিয়েছে–জানতে চাইলে শামীম হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কনস্যুলারে ওগুলো পাঠানো যায় না। ওগুলো আমিই তাকে বলেছি। যে ই-মেইল থেকে পাঠানো হয়েছে, সেটি আমার প্রতিষ্ঠানের ই-মেইল।’ 

শামীম হকের দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ নিয়ে বুধবার ইসিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে শুনানি হয়। পরে শুনানি স্থগিত রেখে ইসি আগামীকাল শুক্রবার রায়ের দিন ধার্য করেছে। আইন অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিক হলে শামীম নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিক, এমন অভিযোগ তুলে তার প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ।

শামীম হক জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আবেদনকারী এ কে আজাদ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য।

৮ ডিসেম্বর এ কে আজাদের পক্ষে তার আইনজীবী মো. গোলাম কিবরিয়া নির্বাচন কমিশনে আপিল আবেদন জমা দেন। 

ওইদিন আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, নৌকার প্রার্থী শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিক। স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ তথ্য-উপাত্তসহ লিখিত অভিযোগ করা সত্ত্বেও রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম হকের মনোনয়নপত্র বাতিল না করে বৈধ ঘোষণা করেন। এ কারণে আমরা নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছি।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম