নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ১৪ রোগীর দশজনই মারা গেছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৪ পিএম
চলতি বছর দেশে নিপাহ ভাইরাসে ১৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০ জনই মারা গেছেন, যা মোট আক্রান্তের ৭১ শতাংশ। দেশে ২০০১ সালে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে নিপাহ ভাইরাসে। রোববার রাজধানীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) মিলনায়তনে নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকিবিষয়ক অবহিতকরণ সভায় এ তথ্য জানানো হয়।
সভায় আলোচকরা বলেন, ভাইরাসজনিত রোগটি সারাদেশে ৩৪টি জেলায় ছড়িয়েছে। রোগটিতে এখন পর্যন্ত ৩৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ভাইরাসটির পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলা হয়, চলতি বছর সাতটি জেলায় ১৪টি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো নরসিংদী জেলায় সংক্রমণ ঘটেছে। এটি নতুন করে শঙ্কার কারণ। এতদিন শুধু উত্তরাঞ্চলে ঘটছে ধারণা করা হলেও এখন তা মধ্যাঞ্চলে পাওয়া গেছে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা যে কয়টা সার্ভিলেন্স কাজ পরিচালনা করি তার মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে নিপাহ সার্ভিলেন্স। কিন্তু এত কিছুর পরেও নিপাহ আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আমরা জ্বর ও খেজুরের রস খাওয়ার ইতিহাসে আটকে আছি। মালয়েশিয়া ও ভারতের কারণের সঙ্গে আমাদের মিল নেই। লক্ষণীয় বিষয় খেজুরের রস নেই এমন দেশেও নিপাহ সংক্রমণ ঘটছে। অর্থাৎ অন্য সোর্স থেকেও ঘটছে। তবে আমাদের দেশে এখনো তা পাওয়া যায়নি।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। তাই দ্রুত শনাক্ত হলেই বেঁচে যাবেন তা বলা কঠিন। আর যারা বেঁচে যান তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না। তারা পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। অর্থাৎ প্রতিরোধ ছাড়া নিপাহ থেকে মুক্তির কোনো সুযোগ নেই।
হাসপাতালে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিপাহ রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করতে চায় না। কেননা সেবাদানকারী ব্যক্তিরাও আক্রান্ত হতে পারে। এ অবস্থায় হাসপাতালে একটি ওয়ার্ড ডেডিকেটেড করা উচিত। যেন রোগীকে আইসোলেটেড (সঙ্গনিরোধ) করা যায়।
ওয়ান হেলথের আহ্বায়ক ড. নিতিশ দেবনাথ বলেন, অনেক দিন ধরে মানুষকে সচেতনে কাজ করা হচ্ছে, কিন্তু সচেতনতা তৈরি হয়নি। নিপাহ ভাইরাস অত্যন্ত জটিল রোগ। ভাইরাসটি বাদুড় থেকে মানুষে ছড়ায়। কিন্তু এটা জটিল প্রক্রিয়াতেও ঘটতে পারে। যেমন বাদুড়ে খাওয়া ফল ছাড়াও শূকর থেকেও নিপাহ মানুষে ছড়িয়েছে। তাই সচেতন হতে হবে। উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এর কোনো প্রতিষেধক বা টিকা নেই, তাই প্রতিরোধই একমাত্র উপায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, আমরা যতদিন আইনি বিধির মধ্যে না আনব তা কতটা কার্যকর হবে সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। এই বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা যায় কি না তা আইইডিসিআর বিবেচনা করতে পারে।
এমআইএসের পরিচালক অধ্যাপক শাহদাত হোসেন বলেন, নিপাহ ভাইরাস আক্রান্তের তথ্যটা সবই নিশ্চিত কেস। তবে যারা সমসাময়িক সময়ে যারা মারা গেছেন তারা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল কি না নিশ্চিত নয়। রোগী শনাক্তে আরও জোর দিতে হবে। রোগটির প্রতিষেধক নেই, মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দিতে হবে। এজন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।