আইসিডিডিআর,বির গবেষণা
দেশে নিউমোনিয়ায় ঘণ্টায় ৩ শিশুর মৃত্যু
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৮ পিএম
বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুর প্রধান সংক্রামক কারণ নিউমোনিয়া। প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। বাংলাদেশে এ অবস্থা আরও খারাপ।
দেশে প্রতি বছর ২৪ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। প্রতি ঘণ্টায় এ সংখ্যা আনুমানিক ২ থেকে ৩ জন। তবে শিশু জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর গুরুত্ব অনেক। এতে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি শতকরা ১৫ ভাগ কম হয় বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) ট্রেকশন কনফারেন্স হলে বৃহস্পতিবার শিশুদের নিউমোনিয়া : আমরা কি যথেষ্ট করছি? শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী প্রতিষ্ঠানটিতে নিউমোনিয়া নিয়ে তার নিজের ও ড. নুর হক আলম, ড. কে জামান এবং ড. আহমেদ এহসানুর রহমানের কয়েকটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।
গবেষণার তথ্য তুলে ধরে ড. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী বলেন, নিউমোনিয়ার ফলে প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়, যা পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের সব মৃত্যুর ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশে প্রতি ঘণ্টায় আনুমানিক ২ থেকে ৩ জন শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়।
এটি পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে ২৪ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী, যা বিশ্বব্যাপী গড় থেকেও বেশি। বিগত কয়েক দশক ধরে মৃত্যুহার উলেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এরপরও গত পাঁচ বছরে প্রতি হাজার জীবিত জন্মে প্রায় ৭ দশমিক ৪ জন শিশু নিউমোনিয়ায় মারা গেছে।
পাশাপাশি প্রায় ৪০ লাখ নতুন রোগীসহ প্রতিবছর আনুমানিক ৬ লাখ ৭৭ হাজার শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
ড. চিশতী বাংলাদেশের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের নিউমোনিয়ার পেছনে বিশেষ কারণ তুলে ধরেন। এতে ২০১৯ ও ২০২১ সালে আইসিডিডিআর,বির গবেষণায় অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী, বিরল গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিষয়টি উঠে আসে। এ ফলাফলগুলো দেখায় যে বিরল গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া শৈশবকালীন নিউমোনিয়ার নতুন কারণ হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে।
ড. চিশতী বলেন, ঘরের মধ্যে বাতাসের গুণগতমান উন্নত করার মাধ্যমে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেক করা সম্ভব। হাত ধোয়ায় নিউমোনিয়া ২১ শতাংশ কমতে পারে।
শিশুদের নিউমোনিয়া নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে আলোচনায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়। প্রথমত, মাত্র ৬০ শতাংশ অভিভাবক যখন তাদের সন্তানদের নিউমোনিয়ার উপসর্গ দেখা যায় তখন চিকিৎসা সেবা নেন। বাকিরাও যাতে এ সময়েই চিকিৎসা নিতে আসেন, এর জন্য আরও জনসচেতনতার প্রয়োজন।
আইসিডিডিআর,বির গবেষণায় উঠে এসেছে, বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পালস অক্সিমিটারের প্রাপ্যতা নিউমোনিয়া রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়।
ড. চিশতী সরকারের ইন্টিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট অব চাইল্ড হুড ইলনেস (আইএমসিআই) উদ্যোগে আইসিডিডিআর,বির ভ‚মিকাও তুলে ধরেন। আইসিডিডিআর,বির উদ্ভাবনী ডে-কেয়ার পদ্ধতি (ডিসিএ) অর্ধেক খরচে গুরুতর নিউমোনিয়া চিকিৎসায় ৭৮ শতাংশ থেকে ৯২ শতাংশ সাফল্যের হার অর্জন করেছে।
ভবিষ্যতে এই পদ্ধতিকে প্রসারিত করার পরিকল্পনাও রয়েছে। নিউমোনিয়া চিকিৎসায় ড. চিশতীর স্বল্পমূল্যের বাবল সিপ্যাপের উল্লেযোগ্য ভূমিকা গবেষণায় উঠে এসেছে। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্ট্যান্ডার্ড অক্সিজেন থেরাপির তুলনায় প্রায় ৭৫ শতাংশ মৃত্যুহার হ্রাস করতে সক্ষম।
শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, নিউমোনিয়ার শুরুতে কাশি হয়, যা সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে এর থেকে শ্বাসকষ্ট এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
আলোচনা সভায় ২০০৭ ও ২০২০ সালে আইসিডিডিআর,বির ভ্যাকসিন নিয়ে করা গবেষণায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উপযোগী হতে পারে এমন একটি টিকা নিয়ে আলোকপাত করা হয়।
আইসিডিডিআর,বির গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভবতীদের আরএসভি ভ্যাকসিন দেওয়া হলে তা নবজাতক শিশুদের গুরুতর নিউমোনিয়া ও হাইপোক্সেমিয়া (রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা) প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলেও আলোচনা সভায় উঠে এসেছে।
আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ইতোপূর্বে ডায়রিয়া শিশুমৃত্যুর প্রধান ঘাতক হলেও, বর্তমানে নিউমোনিয়া শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ।