রাজনীতিতে সংলাপের তাগিদ, ভোট পেছানোর কোনো পরিকল্পনা নেই ইসির
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০২:২৬ এএম
রাজনীতিতে সংলাপের তাগিদ, ভোট পেছানোর কোনো পরিকল্পনা নেই ইসিররাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের বিষয়ে বিভিন্ন মহলের তাগিদ থাকলেও নির্বাচন পেছানোর পরিকল্পনা আপাতত নেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। কমিশন থেকে যে সময়ের মধ্যে তফশিল ঘোষণা ও ভোটগ্রহণের কথা জানানো হয়েছে, ওই সময়ের মধ্যেই তা সম্পন্ন হবে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। প্রার্থীর মনোনয়নপত্রসহ বেশিরভাগ সরঞ্জাম জেলায় জেলায় পাঠানো হয়েছে। ক্রয় প্রক্রিয়ায় জটিলতার কারণে অমোচনীয় কালি ও স্ট্যাম্প প্যাড এখনো ইসির হাতে আসেনি। শেষ হয়নি নির্বাচনি ম্যানুয়েল মুদ্রণের কাজও। দ্বিতীয় ধাপে দেশীয় পর্যবেক্ষক নিবন্ধন কাজও শেষ হয়নি। তবে এসব পণ্যের জন্য তফশিল ঘোষণা আটকে থাকবে না ইসির। দ্রুতই কাজগুলো শেষ করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের প্রথমার্ধে তফসিল এবং জানুয়ারির প্রথমদিকে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কমিশন সভা করে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন। চলতি সপ্তাহে নির্বাচন কমিশনের সভা হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা। ওই সাক্ষাতের পর আগামী সপ্তাহের শুরুতে এ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সভায় তফশিল ঘোষণা করা হতে পারে। গতকাল পর্যন্ত ওই সভার তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তফশিল ঘোষণা এবং জানুয়ারির শুরুতে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা এখনো রয়েছে।
এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি একাধিক নির্বাচন কমিশনার। একজন নির্বাচন কমিশনার যুগান্তরের সঙ্গে আলোচনাকালে জানান, চলতি মাসের প্রথমার্ধে তফশিল ঘোষণা এবং জানুয়ারির প্রথম দিকে ভোটগ্রহণের যে পরিকল্পনা রয়েছে সেখানেই অনড় আছেন তারা। রাষ্ট্রপতি কোনো পরামর্শ বা মতামত দিলে সেটিও বিবেচনা করবে নির্বাচন কমিশন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতে আমরা তফশিল ঘোষণার বিষয়ে আলোচনা করব। সার্বিক দিক বিবেচনায় তিনি কোনো পরামর্শ দিতে পারেন, নাও পারেন। পরে আমরা কমিশন বৈঠকে তফশিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তফশিল ঘোষণার বিষয়ে কমিশনে এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, এ নির্বাচনে ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবেন এসপিরা। ১০ ও ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের ডিসি, এসপি ও নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ১১৪ জনকে ঢাকায় নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া ১২ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা হবে। এদিন নির্বাচনি অ্যাপও উদ্বোধন করবে কমিশন। এসব কার্যক্রম শেষ করার পর তফশিল ঘোষণা হতে পারে। তফশিল ঘোষণার কয়েক দিন আগে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে কমিশন।
জানা গেছে, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই মেরুতে রয়েছে। সিইসিও বলে আসছেন, নির্বাচনের প্রত্যাশিত অনুকূল পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে আসছে। দলটির অনেক নেতা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। হরতাল-অবরোধের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। একইভাবে বিএনপির সমমনা বেশ কয়েকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলও নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে আসছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনের দাবিতে অনড় এসব দল। এ অবস্থায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের পরামর্শ দিয়ে আসছে। যদিও প্রকাশ্যে সংলাপের উদ্যোগ এখনো কেউ নেয়নি। এ কারণে নির্বাচন কমিশনও নির্দিষ্ট সময়েই ভোট করতে চায়। কমিশন মনে করে, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ তাদের নেই। সংবিধান অনুযায়ী, ২৮ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
নির্বাচনের কার্যক্রম শেষের দিকে : নির্বাচন কমিশন জানায়, আরপিও ও বিধিমালা সংশোধন, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা এবং নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনা শেষ করেছে ইসি। ভোটগ্রহণের কাজে ব্যবহৃত গানী ব্যাগ, হোসিয়ান ব্যাগ, মার্কিং সিল, অফিশিয়াল সিল, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স জেলায় জেলায় পাঠানো হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অমোচনীয় কালি এবং স্ট্যাম্প প্যাড কিনতে পারেনি কমিশন। অমোচনীয় কালি ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। আর স্ট্যাম্প প্যাড এ মাসের শেষের দিকে ইসির হাতে পৌঁছার কথা রয়েছে। ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হবে নির্বাচনের ২৫ দিন আগে। ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্রের খসড়া মাঠপর্যায়ে প্রকাশ করে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর নয় লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা (প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং) নিয়োগ দেওয়া হবে। ওই সময়েই তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে কমিশন। এছাড়া তফশিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকেও বসবে ইসি।