মিটফোর্ড হাসপাতাল
বেসরকারিতে পরীক্ষা করতে অস্বীকৃতি, রোগীকে আটকে রাখলেন চিকিৎসক
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৪১ পিএম
চিকিৎসকের পছন্দের বেসরকারি হাসপাতালে রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে অস্বীকৃতি জানানোয় পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারী রোগীকে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। রোববার ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের নাক-কান ও গলা বিভাগের চিকিৎসক তামান্না রহমান এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। হয়রানি ও দুর্ব্যবহারের শিকার ওই রোগী সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
ভুক্তভোগী হিরনা আহসান যুগান্তরকে সোমবার বলেন, আমি বৃহস্পতিবার কান ও বুকের সমস্যার চিকিৎসা নিতে মিটফোর্ড হাসপাতালে যাই। নাক কান গলা বিভাগে ডাক্তার দেখানোর জন্য বহির্বিভাগের টিকিট কাটি। সেখানে ডা. তামান্না আমাকে দেখেন। তিনি সেদিন বুক ও মাথার তিনটি এক্স-রে, রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও রক্তের সিবিসি, আরবিএস, ক্রিটেনিন ও এইচবিএসএজি, বিটি, সিটি এবং হার্টের ইসিজি পরীক্ষার পরামর্শ লিখে দেন। পরীক্ষাগুলো পাশের বেসরকারি মেডিপ্যাথ ডি. ল্যাব অ্যান্ড হাসপাতালে করতে বলেন। তখন বলি, আমি মিটফোর্ডে করাতে চাই। এখানকার যন্ত্রপাতি ভালো। তখন ডাক্তার ধমকের স্বরে বলেন, আপনি আমার চেয়ে কি বেশি বোঝেন? এই বলে দুর্ব্যবহার করে তিনি দুটি টেস্ট কেটে দিয়ে বাকিগুলো বেসরকারি থেকে করাতে বলেন। কিন্তু আমি বেসরকারিতে না নিয়ে দুটি এক্স-রে মিটফোর্ডে করি। শনিবার টেস্টের রেজাল্ট দেখানোর কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে পরদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বহির্বিভাগে ২২৩ নম্বর কক্ষে ডা. তামান্নার কাছে রিপোর্ট দেখাতে যাই। এবার ডা. তামান্না আমাকে দেখেন এবং জানতে চান, আমি বাকি পরীক্ষাগুলো কেন মেডিপ্যাথ ডি. ল্যাব অ্যান্ড হাসপাতাল থেকে করাইনি। এবারও বলি, আমি মিটফোর্ড থেকে করাতে চাই।
হিরনা আহসান বলেন, আমার সঙ্গে কথাকাটাকাটি করে তিনি অন্য রোগীদের মাস্ক পরা নিয়ে খারাপ ব্যবহার করেন। তখন আমি তাকে ভদ্রভাবে বলি, আপনারাও মাস্ক পরলে ভালো হয়। এ কথা শুনে ডা. তামান্না প্রচণ্ড রেগে যান। চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। তিনজন আনসার সদস্যকে ডেকে আমাকে আড়াইটা পর্যন্ত আটকে রাখতে বলেন। তিনি আমার সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করেন। আনসার সদস্যরা আমাকে রুম থেকে বের করে বাইরে বসার স্থানে আটকে রাখেন। একজন আনসার সদস্য আরেক আনসার সদস্যকে ফোন করে বলেন, একজন চোর ধরেছি। তখন তাকে বলি, আমি চোর না, কেন আমাকে চোর বলা হলো। তখন আমি তার ইউনিফর্মের নামের ব্যাজ দেখি। সেখানে তার নাম ছিল দেলোয়ার হোসেন। আমি বলি, আপনার নাম দেলোয়ার হোসেন, এ কথা শুনে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ব্যাজ খুলে ফেলেন। অন্য আনসার সদস্যদের নজরদারিতে রেখে আমাকে প্রায় আধঘণ্টা আটকে রাখেন। আমি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তাদের কাছে ক্ষমা চাই। তখন তারা আমাকে ছেড়ে দেন।
এ বিষয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. কাজি রশিদ-উন-নবী যুগান্তরকে বলেন, একজন রোগীর সঙ্গে এমনটা করা উচিত হয়নি। ঘটনার বিষয়ে কেউ তাকে জানাননি। অবশ্যই ওই চিকিৎসককে ডেকে ঘটনার কারণ জানব। রোগীকেও এসে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে। দুপক্ষের শুনানির পর অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।