বাবার জামিন, ভারতীয় মায়ের কাছে থাকবে শিশু
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:১৪ পিএম
আদেশ না মেনে শিশুকে নিয়ে দেশত্যাগ করায় আদালত অবমাননার মামলায় ছয় মাসের দণ্ডিত বাবা সানিউর টিআইএম নবীকে জামিন দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে এ বিষয়ে পারিবারিক আদালতে থাকা মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিশুটি মা সাদিকা শেখের কাছে থাকবে। বাবা সপ্তাহে দুদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুটির সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
তবে আদালতের অনুমতি ছাড়া শিশুকে দেশের বাইরে নেওয়া যাবে না। শিশুটির মা ভারতের হায়দরাবাদের নাগরিক।
সোমবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে শিশুটির মায়ের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম। বাবার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুন্সি মনিরুজ্জামান। পরে শিশুটির মা সাদিকা সাঈদ বলেন, বাংলাদেশের আদালত ও প্রধান বিচারপতির কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার আইনজীবীদের কাছেও কৃতজ্ঞ। আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি।
২০২১ সালের ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট দুই মাসের জন্য ওই শিশুকে ভারতীয় নাগরিক মা সাদিকা সাঈদের হেফাজতে রাখার আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয়, মা ও শিশু মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) ব্যবস্থাপনায় থাকবে। তবে বাংলাদেশি বাবা সপ্তাহে তিন দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শিশুর সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। এ দুই মাস সাদিকা সাঈদের পাসপোর্ট গুলশান থানায় জমা রাখতে বলা হয়।
ওই বছরের ১৬ নভেম্বর সাদিকা সাঈদের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের তিন বছরের শিশুসন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশি নাগরিক বাবা শাহিনুর টিআইএম নবীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট।
শিশুকে নিয়ে বাবা শাহিনুর যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন সেজন্য ইমিগ্রেশন পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। ওই দিন শিশুটির বাবার পক্ষে আইনি লড়াই থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। কারণ ওই শিশুকে মায়ের আইনজীবীর কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট; কিন্তু শিশুর বাবা আইনজীবীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি।
শিশুর মায়ের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম বলেন, হাইকোর্টের আদেশের পর শিশুর বাবা তার সন্তানকে উন্নত পরিবেশে গুলশান ক্লাবে রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শিশুর মঙ্গলের কথা চিন্তা করে আমরাও রাজি হই। গুলশান ক্লাবেই মা ও শিশু অবস্থান করছিলেন। একপর্যায়ে তিন বছরের ওই শিশুকে বেড়ানোর কথা বলে গুলশান ক্লাব থেকে নিয়ে যান বাবা শাহিনুর। পরে আর মায়ের কাছে দিয়ে যাননি। এর মধ্যে শিশুর মায়ের বিরুদ্ধে জিডি ও মামলা করেন শাহিনুর। এ বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হলে আদালত মঙ্গলবার সকালের মধ্যে শিশুকে আদালতে হাজির করতে বলেছিলেন; কিন্তু আদালতের আদেশ প্রতিপালন করা হয়নি।
আইনজীবী কাজী মারুফুল আলম বলেন, আমরা জানতে পারি শিশুকে নিয়ে তার বাবা অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হলে হাইকোর্ট তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি লাখ টাকা জরিমানা করেন। সম্প্রতি শিশুর বাবা দেশে ফিরে এসে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে আপিল বিভাগে জামিন আবেদন করেন শিশুর বাবা শাহিনুর টিআইএম নবী। শিশুটিকে মায়ের কাছে ফেরত দেওয়ার শর্তে আপিল বিভাগ তাকে জামিন দেন। তবে জরিমানার আদেশ বহাল রয়েছে বলে জানান আইনজীবীরা।
তারা বলেন, ভারতের বিয়ে সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দরাবাদের সাদিকা সাঈদ শেখ নামে এক মেয়েকে বিয়ের জন্য পছন্দ করেন ঢাকার বারিধারার এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান শাহিনুর টিআইএম নবী। মেয়েটি হায়দারাবাদের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান।