জাতীয় উপকূল সংলাপে বক্তারা
জলবায়ু শরণার্থী হবে ২ কোটি মানুষ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৪৮ পিএম
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এখনই সমাধান করা না হলে দুই কোটি মানুষ জলবায়ু শরণার্থী হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন বক্তারা। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইশতেহারে উপকূলীয় মানুষের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার সংযুক্ত করার দাবিতে উপকূলের মানুষের ইশতেহার শীর্ষক জাতীয় উপকূল সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংলাপ আয়োজনে সহায়তা করে বেসরকারি সংস্থা লিডার্স এবং পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (প্রাণ)।
সংলাপে লিডার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, উপকূলীয় অঞ্চলে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে অবকাঠামো, শিক্ষা, চিকিৎসা, অর্থনৈতিক, সামাজিক, কৃষি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য উপকূলীয় এলাকায় সামগ্রিক ও টেকসই উন্নয়নে আন্তঃমন্ত্রণালয় সংযোগস্থাপনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততার পরিমান বেড়ে যাচ্ছে। ফলে গর্ভবতী মা ও কিশোরীদের উপর প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ঝুঁকিতে পড়ছে। এছাড়া তাদের উচ্চ রক্তচাপের হার বেড়েছে। তাই নিরাপদ পানীয়জলের স্থায়ী ব্যবস্থা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুর্যোগকালীন আশ্রয় গ্রহণের জন্য সরকার তিনটি বিভাগে ১৬টি দুর্যোগপ্রবণ জেলার ৮৬টি উপজেলায় মোট ২৪৮৭টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এগুলোর মোট ধারণক্ষমতা ১৯ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ জন, যা ওসব এলাকার মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষকে আশ্রয় দিতে পারে। এছাড়া দুর্যোগকালে সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়াও কষ্টকর। গত দুটি দুর্যোগে (আমফান ও ইয়াশ) ঝুঁকিগ্রস্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে না যাওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, স্থানের অভাব, নারীদের নিরাপত্তাহীনতা, বাড়িতে রেখে যাওয়া দলিলপত্র ও সম্পদের নিরাপত্তাহীনতা। এজন্য উপকূলীয় এলাকায় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আদলে একটি বাড়ি একটি শেল্টার কার্যক্রম শুরু করতে হবে, যাতে মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় নিজ বাড়িতে নিরাপদে অবস্থান করতে পারে। সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটকে জলবায়ু দুর্যোগ ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করতে হবে।
প্রতিবেদনে সুন্দরবনকে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের রক্ষা কবচ উল্লেখ করে বলা হয়, বিভিন্ন কারণে সুন্দরবন হুমকির সম্মুখীন। উপকূলীয় অঞ্চলকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করার জন্য ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ, সবুজ বেষ্টনী তৈরি, নদীর চর বনায়নসহ সুন্দরবন সুরক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
সংলাপে ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল। দাবিগুলো হলো, নিরাপদ পানীয় জলের স্থায়ী ব্যবস্থা, একটি বাড়ি একটি শেল্টার তৈরি প্রকল্প, দুর্যোগপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করা, উপকূলের রক্ষাকবচ সুন্দরবন সুরক্ষা এবং স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ পুননির্মাণ ও ভঙ্গুর স্লুইচগেট মেরামত করা। এছাড়া আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি ইশতেহারে উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাগোনারী প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসি, নাগরিক সমাজের আলী নূর, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির সদস্য শেখর দত্ত, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সংশপ্তকের নির্বাহী মামুন চৌধুরী, বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাব্বাহা আলী খান কলিন্স, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মানবেন্দ্র দেব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ খাইরুজ্জামান কামাল, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত প্রমুখ।