‘জেসমিনের মৃত্যু নিয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির প্রতিবেদন অস্পষ্ট, সন্তোষজনক নয়’
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:২১ পিএম
র্যাব হেফাজতে নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের (৪০) মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে গঠিত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদন সন্তোষজনক নয় বলে অভিমত দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেছেন, প্রতিবেদনটি অস্পষ্ট। প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। তাকে গ্রেফতারের পর আত্মীয়স্বজনকে জানানো হয়েছিল কিনা, সে বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। যে কারণে আদালত এ প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নয়।
রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ অভিমতসহ আদেশ দিয়েছেন।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ছয়টি দিক তুলে ধরে আদালত বলেন, প্রতিবেদনটি অস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ফাইন্ডিংস উল্লেখ করা হয়নি। ভুক্তভোগীকে গ্রেফতার করার সময় নিয়েও তথ্যগত ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। রুল শুনানির জন্য প্রস্তুত, তাই ২৯ নভেম্বর বেলা ২টায় রুল শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করা হলো।
আদেশের পর আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক গণমাধ্যমকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব কর্তৃক যে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে সেই প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। তাকে গ্রেফতারের পর আত্মীয়স্বজনকে জানানো হয়েছিল কিনা, সেই বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। দাখিল করা প্রতিবেদনে আদালত সন্তোষজনক নয়, তাই রুল শুনানির জন্য ২৯ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গত ২০ আগস্ট আদালতে দাখিল করা হয়। সেদিন আদালত আদেশের জন্য ১৫ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। এর ধারাবাহিকতায় রোববার বিষয়টি কার্যতালিকায় ওঠে। আদালতে রিট আবেদনকারী আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক শুনানিতে ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান ও তৌফিক সাজাওয়ার।
সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। গত ২২ মার্চ নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে তাকে আটক করে র্যাব। ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
র্যাবের ভাষ্য, প্রতারণার অভিযোগে সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়েছিল। আটকের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিচারিক তদন্ত চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক গত ২৮ মার্চ রিটটি করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।
আদেশে জেসমিনের মৃত্যুর পুরো ঘটনা তদন্তে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
কমিটিতে নওগাঁর জেলা ও দায়রা জজ এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে অন্তর্ভুক্ত করে ওই কমিটি গঠন করতে বলা হয়। একই সঙ্গে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।