মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চলাকালে যারা আইন লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩ বাস্তবায়ন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ কথা জানান।

মন্ত্রী বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইন অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনা এবং সংরক্ষণের সময়ে কোনো মাছ ধরা নৌযান যাতে নদী বা সাগরে যেতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 

গত বছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের ২২ দিনে প্রায় ৫২ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। ফলে গত বছর প্রায় ৮ লাখ ৫ হাজার ৫১৫ কেজি ডিম উৎপাদন হয়েছে, যা থেকে প্রায় ৪০ হাজার ২৭৬ কোটি জাটকা ইলিশ যুক্ত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের কৃষ্টির উল্লেখযোগ্য একটি অংশজুড়ে রয়েছে ইলিশ মাছ। বিশ্বে উৎপাদিত মোট ইলিশের ৮০ ভাগের ঊর্ধ্বে বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। 

তিনি আরও বলেন, এ বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান পালন করা হবে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর সরকার আরও বেশি তৎপর রয়েছে যাতে মা ইলিশ কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। 

এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সরকার এ বছর মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান পালন করতে যাচ্ছে। এর উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জলপথে, স্থলপথে এমনকি আকাশ পথে মা ইলিশ রক্ষায় পর্যবেক্ষণ করবে। 

মন্ত্রী আরও জানান, ইলিশ সম্পদের উন্নয়নে সরকার নানা সমন্বিত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় ইলিশ আহরণ আশাতীতভাবে বেড়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের আহরণ ছিল ২.৯৮ লাখ মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় ইলিশের আহরণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫.৭১ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সাংবাদিকদের মন্ত্রী আরও জানান, পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা জলবায়ুর কারণে ইলিশের বিচরণ ও গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন হয়। অপরিকল্পিত ড্রেজিং, যানবাহন থেকে নির্গত পোড়া তেলের দূষণ, অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ আহরণসহ নানা কারণে ইলিশের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এরপরও সরকার ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট রয়েছে।

ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ইলিশ এখন কূটনীতির অংশে পরিণত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সীমিত পরিসরে ইলিশ রপ্তানি হয়ে থাকে; যা প্রতিবেশী দুই দেশের বাণিজ্যিকসহ কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। 

ইলিশের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ইলিশ উৎপাদনে ব্যয় না থাকলেও ইলিশ আহরণ, সংরক্ষণ ও পরিবহন খাতে ব্যয় রয়েছে। নিষিদ্ধ সময়ে যারা ইলিশ আহরণে বিরত থাকে তাদের জন্য ভিজিএফ সহায়তা, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ নানাভাবে সরকার সহায়তা করে। 

মন্ত্রী বলেন, মাছ আহরণের কেন্দ্র থেকে বিপণন পর্যন্ত আরও বেশি কঠোর নজরদারি এবং দেখভাল করা হলে ইলিশের দাম আরও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব। 

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, অতিরিক্ত সচিব আব্দুল কাইয়ূম, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।