Logo
Logo
×

জাতীয়

সিলেট-বরিশালসহ বিভিন্ন শহরে জলাবদ্ধতা

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১০:১৪ পিএম

সিলেট-বরিশালসহ বিভিন্ন শহরে জলাবদ্ধতা

টানা বর্ষণে সিলেট ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নগরীর অনেক বাসাবাড়িতেও পানি প্রবেশ করেছে। এতে দুর্বিষহ দিন কাটছে বাসিন্দাদের। সিলেটে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও পানি ঢুকেছে। হবিগঞ্জ শহরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে অন্তত ২২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। কিশোরগঞ্জে রেললাইনের মাটি সরে সাড়ে ৫ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মেহেরপুরে পানিতে ডুবে ফসল ও মাছের খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই চার জেলায় প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ১৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও ৭ হাজারের বেশি মাছের খামার ও পুকুর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। রাজশাহীতে খামারের মাছ ভেসে যাওয়া আটকাতে গিয়ে স্রোতে ভেসে যাওয়া জেলের লাশ শনিবার উদ্ধার করা হয়েছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সিলেটে নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা: ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কাজলশাহ, শাহজালাল উপশহর, দরগামহল্লা, কালীঘাট, বাগবাড়ি, কানিশাইল, লামাপাড়া, লালা দিঘিরপাড়, মাছুদিঘিরপাড়, বাদামবাগিছা, শাহপরান, কুয়ারপাড় উপশহর, সোবহানীঘাট, যতরপুর, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, কামালগড় ও দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুর, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনসহ নগরের বেশির ভাগ এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। নগরীর উঁচু এলাকা টিলাগড়, মেজরটিলা এলাকারও অনেক বাসায় পানি ঢুকেছে। আর নিচু এলাকার অনেক রাস্তায় কোমরসমান পানি। শনিবার সকালে পানিতে নিচতলা তলিয়ে যায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। এতে ব্যাহত হয় সেবা। দুপুরের দিকে হাসপাতালের পানি নেমে যায়। এদিন ভোরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। তার বাসাও পানিমগ্ন। ভিডিওতে দেখা যায়, তার বাসার নিচতলায় পানি থৈ থৈ করছে। আসবাবপত্র অর্ধেক ডুবে আছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ভারি বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি কমলে পানি নেমে যাবে। 

বরিশালে তলিয়ে গেছে সড়ক: নগরীর বটতলা থেকে হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা সড়ক, বটতলা আদম আলী হাজির গলি, অক্সফোর্ড মিশন রোড, করিম কুটির, কলেজ এভিনিউ, গোরস্থান রোড, বগুড়া রোড, বিএম স্কুল সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া রূপাতলী হাউজিং, ধান গবেষণা সড়কের খ্রিষ্টান কলোনি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা কলোনি, পার্শ্ববর্তী শেবাচিম হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি স্টাফ কোয়ার্টার, কালুশাহ সড়ক, কাজিপাড়া ও কাউনিয়া এলাকার বেশ কিছু সড়কেও হাঁটুপানি। নগরীর নিুাঞ্চলের অধিকাংশ টিনের ঘর, অর্ধপাকা ও পাকা ভবনের নিচতলা পানির নিচে। এতে দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। নগরীর প্যারারা রোডের বাসিন্দা আলামিন হাওলাদার জানান, কয়েক দিন ধরে ঘরে বৃষ্টির পানি। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সীমাহীন কষ্টে আছি। 

কিশোরগঞ্জে সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক: অবিরাম বৃষ্টিতে সকাল সাড়ে ১০টায় ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রেলপথের মানিকখালী ও হালিমপুরের মধ্যবর্তী রেললাইন থেকে মাটি সরে গিয়ে ভেঙে যায়। এতে এ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে দুপুর পৌনে ৩টার দিকে লাইন মেরামতের পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

২২ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন হবিগঞ্জ শহর: শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ড, শায়েস্তানগর, শ্যামলী, সিনেমা হল রোড, মুসলিম কোয়ার্টার, মোহনপুর, রাজনগর, কামড়াপুর, বগলাবাজারসহ অধিকাংশ এলাকা পানিমগ্ন হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে বাসাবাড়িতেও পানি প্রবেশ করেছে। এদিকে বৃষ্টি শুরুর পর বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় ২২ ঘণ্টা জেলা শহর বিদ্যুৎবিহীন ছিল। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটও বন্ধ হয়ে যায়। শুক্রবার রাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।

রাজশাহীতে জেলের লাশ উদ্ধার: জেলার গোদাগাড়ীতে শনিবার সকালে ঢলে ভেসে যাওয়া মোকসেদ আলী (৫৫) নামে এক জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার কমলাপুর বিলে বৃষ্টির সময় পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়া আটকাতে গিয়ে তিনি পানির তোড়ে ভেসে গিয়েছিলেন। মোকসেদ আলী দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা গ্রামের বাসিন্দা।

নান্দাইল (ময়মনসিংহ): নান্দাইলে এক রাতের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রোপা আমনসহ বিভিন্ন কৃষিজমি ও মাছের খামার। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ২২ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ করা হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২ হাজার হেক্টর জমির ধান। এর মধ্যে ৫ হাজার হেক্টর জমি সম্পূর্ণ, ৭ হাজার হেক্টর আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। অন্যান্য কৃষি আবাদ (সবজি, পান ও আখ) নিমজ্জিত হয়েছে ১৭৫ হেক্টর। অপর দিকে উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, পানি বৃদ্ধির কারণে প্রায় ৫৫০ হেক্টর মাছের খামার পানির নিচে। এতে প্রায় ৯০০ মেট্রিক টন মাছ বের হয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, পানি নেমে গেলে বাকি ফসল ও মাছ রক্ষায় আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ): উপজেলার কাঁঠাল, কানিহারি, ধানীখোলা, মঠবাড়ী, আমিরাবাড়ীসহ অধিকাংশ ইউনিয়নের বেশির ভাগ মাছের খামার ও ফসলি জমিতে থইথই পানি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ বলেন, দুদিনের ভারি বর্ষণে উপজেলার প্রায় ৭০০ হেক্টর মাছের খামার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। মৎস্য চাষি মিজানুর রহমান, রেজাউল করিম ও সুমন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা শেষ, নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমরা ছোট খামারি। ব্যাংক থেকে লোন করে ফিশারি করেছি। এখন কী করব বুঝতে পারছি না।

কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় সাড়ে ৩ হাজার মৎস্য চাষির ৬ হাজার ৬৪১টি পুকুর ও খামার তলিয়ে গেছে। শনিবার সকাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে, এসব পুকুর ও খামার থেকে প্রায় সাড়ে ১৮শ  মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। যার বাজারমূল্য আনুমানিক  ৩৭ কোটি ৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। অন্য দিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৬২০ হেক্টর রোপা আমন ধান ও ৫৭০ হেক্টর সবজির জমি তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে বেশি সবজি খেত তলিয়ে গেছে জেলার পাকুন্দিয়া, বাজিতপুর, হোসেনপুর ও সদর উপজেলায়। আর সবচেয়ে বেশি রোপা আমন ধান তলিয়ে গেছে কটিয়াদী উপজেলায়।

বানিয়াচং (হবিগঞ্জ): বানিয়াচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এনামুল হক জানান, উপজেলার ১ হাজার ৭০ হেক্টর রোপা আমন পানিতে তলিয়ে গেছে। সবজির খেত ডুবেছে ৫০ হেক্টর। তিনি বলেন, কৃষকের ক্ষতি পূরণের জন্য উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করা হয়েছে।

মেহেরপুর: স্থানীয় মাছ চাষিরা জানান, জেলায় শতাধিক পুকুর ডুবে প্রায় ৩০ টন মাছ ভেসে গেছে। সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের মাছচাষি শাহিন খান বলেন, আমি প্রায় এক যুগ ধরে মাছ চাষ করে আসছি।  গ্রামের অনেকেই ডোবা এলাকায় দুই তিন ফুট মাটির পাড় বেঁধে মাছ চাষ করছেন। এখানে তেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় কারও তেমন প্রস্তুতি ছিল না। বৃহস্পতিবার রাতভর বৃষ্টিতে অধিকাংশ পুকুর ডুবে গেছে।

ভালুকা (ময়মনসিংহ): সরকারি হিসাব অনুযায়ী ভালুকা উপজেলার দুই শতাধিক মাছের খামার-পুকুর তলিয়ে গেছে। শুক্রবার রাতে উজানের ঢলে ভালুকা-সাখিপুর সড়কে পানি ওঠে। এতে ভালুকার সঙ্গে টাঙ্গাইল জেলার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। 

ফুলপুর (ময়মনসিংহ): উপজেলার ছনধরা, সিংহেশ্বর, ফুলপুর, রামভদ্রপুর, বালিয়া ও বওলা ইউনিয়নের অধিকাংশ ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল): ঘাটাইল পৌরসভার বিভিন্ন মহল্লা ও এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ঝড়কা চৌরাস্তা থেকে কাইতকাই রোডে হাঁটুপানি জমেছে। রয়েল ক্যাডেটের সামনে পানি মাড়িয়ে লোকজনকে চলাচল করতে দেখা গেছে। এছাড়া পৌরসভার সবুজবাগ, মাস্টারপাড়া, শান্তিনগর এলাকার কিছু অংশে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে।

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ): ফুলজোর নদীতে আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ৪ দিনে উপজেলার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের বন্যাকান্দি খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায় ৭টি বাড়ি এবং প্রায় ১৫ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আরও ৮-১০টি বাড়ি ভাঙনের মুখে পড়েছে। বসতভিটা হারিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন বাসিন্দারা। অনেকে ভাঙন আতঙ্কে ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম