এডিসি সানজিদাকে কয়েক মাস ধরেই নজরদারি করছিলেন মামুন

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১৩ পিএম

ছাত্রলীগের দুই নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে বেধরক পিটুনি, সাবেক এডিসি হারুনের সাময়িক বরখাস্তসহ এই ইস্যুতে নানা নাটকীয়তার সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
ইতোমধ্যে এডিসি হারুনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা। এমনকি যাকে নিয়ে এই ঘটনার সূত্রপাত, সেই পুলিশ কর্মকর্তা এডিসি সানজিদাও এখন হারুনের পক্ষ অবলম্বন করেছেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতির এপিএস ও ছাত্রলীগ নেতারাই প্রথমে এডিসি হারুনকে মারধর করেছিলেন। এপিএস মামুনের দায় বের করতে যেখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়, সেই বারডেম হাসপাতালে কী ঘটেছিল, সেটি তদন্ত করে বের করা উচিত বলে মনে করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর রশীদ।
তিনি বলেন, এপিএস মামুন এবং ছাত্রলীগ নেতারাই বারডেম হাসপাতালে আগে এডিসি হারুনকে মারধর করেছেন। একই ধরনের তথ্য তুলে ধরে এডিসি হারুনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন এপিএস’র স্ত্রী পুলিশের এডিসি সানজিদা আফরিনও।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যাকে ঘিরে ঘটনার সূত্রপাত সেই নারী এডিসি সানজিদার বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। সর্বশেষ হারুনের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কে জড়ান বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি বেশ কয়েক মাস ধরে তার স্বামী ও রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল গোপনে নজরদারি করছিলেন।
মঙ্গলবার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘স্বামীর চেয়ে স্যার যখন বেশি আপন হয়, তখন বিষয়টা অস্বাভাবিক না? আপনার নিজের বড় বোনও ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তার, যেহেতু উল্টাপাল্টা পোশাকের বিষয় আপনিই বলেছেন, ইসিজি ইটিটি তো আপনি ওনার ওখানেও করতে পারতেন।
এ ছাড়া, পুলিশ হাসপাতাল হচ্ছে দেশের অন্যতম ভালো একটা হাসপাতাল, আপনি তো সেখানেও যেতে পারতেন। এই এডিসি হারুনকে এক সপ্তাহ আগেও আপনার হাজব্যান্ড অনুরোধ করেছিল তার সংসার না ভাঙার জন্য। এরপরও কেন তাকেই আপনার সাথে নিতে হলো। আর আপনার হাজব্যান্ড কেন তাকে অনুরোধ করেছিল?’
শনিবার রাতে তুলে নিয়ে শাহবাগ থানা হেফাজতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্যাতন করেন এডিসি হারুন-অর-রশীদ। আহতরা হলেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম।
ভুক্তভোগী ও তাদের সহপাঠীদের অভিযোগ, পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি হারুন-অর-রশীদ তাদের থানায় নিয়ে বেদমভাবে পিটিয়েছেন। ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দেওয়ার পরও হারুনের সঙ্গে ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্য মিলে তাদের পেটান।
এডিসি হারুন-অর-রশীদ মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘শনিবার আমি আমার বাবা-মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক পবিত্র কুমারের কাছে যাই। বেলা ২টার দিকে আমাদের এডিসি ক্রাইম-১ ফোন করে বলেন, তার বুকে ব্যথা। সেজন্য বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক রশিদ স্যারের সিরিয়াল (অ্যাপয়েন্টমেন্ট) চান। আমি রমনা থানার ওসির মাধ্যমে সন্ধ্যা ৬টায় সিরিয়ালের ব্যবস্থা করি।
কিন্তু ব্যস্ততার কারণে চিকিৎসক নির্ধারিত সময়ে এডিসিকে সময় দিতে পারছিলেন না। বিষয়টি আমাকে জানানোর পর আমি চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলার জন্য সেখানে যাই। আমি যাওয়ার পর চিকিৎসক তাকে (এডিসি সানজিদা) দেখেন। আমি বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। এ সময় তখন ডিসি সানজিদার স্বামী মামুন এবং তার সঙ্গে আরও চার-পাঁচজন এসে পেশেন্টের রুমে যান। পরে বাইরে এসে কোনো কথা ছাড়াই মামুন আমার বাম চোখের ওপর একটা ঘুসি মারেন। তখন তার সঙ্গে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরাও আমার ওপর চড়াও হন।
তারা আমাকে জোর করে ইটিটি রুমের ভেতরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। ওখানেও আমাকে মারধর করেন। পরে আমি আত্মরক্ষার্থে শাহবাগ থানা-পুলিশকে কল করি। শাহবাগ থানা-পুলিশ এসে সবাইকে থানায় নিয়ে যায়।’
নির্যাতনের ঘটনার পর সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এডিসি হারুনকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এডিসি সানজিদা আফরিনকে রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে (পিটিসি) বদলি করা হতে পারে। আজ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছে।