Logo
Logo
×

জাতীয়

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির জবাবে যা জানাল গ্রামীণ টেলিকম

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১৩ পিএম

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির জবাবে যা জানাল গ্রামীণ টেলিকম

শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ‘বিচারিক হয়রানি’ নিয়ে ১০০ জনেরও বেশি নোবেল পুরস্কারজয়ীসহ ১৭৫ জন বিশ্বনেতার খোলা চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি বিষয়ে লিখিত বক্তব্য দিয়েছে গ্রামীণ টেলিকম।

কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা, প্রফেসর ইউনূসের কর ফাঁকির অভিযোগ ও গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ থেকে তার পদত্যাগের বিষয়ে রোববার নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে গ্রামীণ টেলিকম।

এতে বলা হয়, দারিদ্রতার স্থায়ী সমাধান ও বেকারত্ব নিরসনে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ড. ইউনূস বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ৫০টির মতো সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যাতে বিশ্ববাসীর কাছে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সামাজিক ব্যবসার মডেল হিসেবে দাঁড় করানো যায়। এই সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে গ্রামীণ টেলিকম এবং প্রফেসর ইউনূস গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান।

কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের মামলা

কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তর গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছে তা উল্লেখ করে সংস্থাটির বক্তব্যে তাদের ব্যাখ্যা দিয়েছে।

অভিযোগ-

চাকরি স্থায়ী না করা: ধারা ৪(৭)(৮) অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবীশকাল সময় শেষে আইনের বিধান অনুযায়ী স্থায়ীকরণ করা হয়নি।

ব্যাখ্যা

গ্রামীণ টেলিকম নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। কারণ, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেগুলো চুক্তিভিত্তিক এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নবায়নের মাধ্যমে পরিচালনা করে। নোকিয়া কেয়ার, হুয়াওয়ে কেয়ার ও পল্লীফোন কার্যক্রম ৩ বছরের চুক্তি অনুযায়ী পরিচালিত হয় এবং ৩ বছর পর আবার চুক্তি নবায়ন করে পরিচালনা করা হয়।

যেহেতু গ্রামীণ টেলিকমের কার্যক্রম চুক্তির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে, সেজন্য সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়িক চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তির মেয়াদও বৃদ্ধি করা হয়েছে। গ্রামীণ টেলিকমের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে স্থায়ী কর্মীর মতোই প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুয়িটি, অর্জিত ছুটি, অবসরকালীন ছুটিসহ সব সুবিধাই দেওয়া হয়।

ধারা ৪(৮) এর উল্লেখ রয়েছে যে, শিক্ষানবিশকাল শেষে বা তিন মাস মেয়াদ বৃদ্ধির পর কনফারমেশন লেটার দেওয়া না হলেও উপ-ধারা (৭) এর বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শ্রমিক স্থায়ী বলে গণ্য হবে।

দুদকের মামলা বিষয়ে নিজেদের বক্তব্যে গ্রামীণ টেলিকম বলেছে, ডাব্লিউপিপিএফ গ্রামীণ টেলিকমের জন্য প্রযোজ্য না হলেও একের পর এক মামলা এবং মামলায় আদালতের আদেশ ও নির্দেশনা দেখে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ ভীত হয়। 
অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট শ্রম অধিদপ্তর ও আইন শৃঙ্খলা সংস্থাগুলোর চাপের মুখে পড়ে বিতরণযোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও পারিপার্শ্বিক অবস্থায় নিরুপায় হয়ে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ও সিবিএর সঙ্গে চুক্তি করে, যা আদালতের আদেশ মেনেই করা হয়েছে।

সিবিএর সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক ২০১০ সাল থেকে শুরু করে ২০২১-২০২২ অর্থ বছর পর্যন্ত নেট প্রফিটের ৫ শতাংশ ডাব্লিউপিপিএফ পাওনার ৯০ শতাংশ টাকা শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই দেওয়া হয়েছে। মোট সুবিধাভোগী ১৬৪ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৫৬ জনকে তাদের প্রাপ্য টাকা দেওয়া হয়েছে। 

বাকি ৮ জনের মধ্যে ৪ জন দেশের বাইরে এবং ৪ জন মারা গেছেন। তাদের অংশ সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে রয়েছে, যা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরিশোধ করা হবে।

এই পরিস্থিতিতে এসে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দাবি তুলছে যে, সিবিএর সঙ্গে সমঝোতা করে গ্রামীণ টেলিকম ডাব্লিউপিপিএফর টাকা শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে সরাসরি পরিশোধ করেছে, যার কোনো বিধান শ্রম আইন ২০০৬ এ নেই। সুতরাং, ডাব্লিউপিপিএফ বাবদ টাকা পরিশোধ করা বে-আইনি এবং গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ দায়ের প্রক্রিয়া চালু করেছে।

গ্রামীণ টেলিকম ইচ্ছাকৃতভাবে ডাব্লিউপিপিএফর অর্থ পরিশোধ করেনি। পারিপার্শ্বিক বিরূপ পরিস্থিতিসহ ভয়ের-কারণে ডাব্লিউপিপিএফর অর্থ বিতরণে গ্রামীণ টেলিকম বাধ্য হয়েছে।

দুদক উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার বাদী হয়ে গত ৩০ মে ড. ইউনূস ও আরও সাত জন বোর্ড মেম্বারের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করে। 

এজাহারে বলা হয়, ড. ইউনূস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকম বোর্ডের সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে গ্রামীণ টেলিকমের ১০৮তম বোর্ড সভায় ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান শাখায় একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সিদ্ধান্ত হয়। তবে হিসাব খোলার এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের একদিন আগেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। 

গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাৎসরিক নীট মুনাফা ডাব্লিউপিপিএফর ৫ শতাংশ পাওনা পরিশোধের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল চুক্তির মধ্যে ৯ মে তারিখের খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি দেখানো হয়েছে, যা বাস্তবে অসম্ভব। এমন ভুয়া সেটেলমেন্ট চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ও বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকম বিভিন্ন সময়ে উল্লেখিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করে। 

কিন্তু কর্মচারীদের ৫ শতাংশ লভ্যাংশ বিতরণের আগেই তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদেরকে না জানিয়ে আসামিরা আত্মসাৎ করেন। অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃত পক্ষে হস্তান্তর করা হয়েছে এক কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তার গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা ও অ্যাডভোকেটসহ সংশ্লিষ্টরা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।

এ বিষয়ে নিজেদের ব্যাখ্যায় গ্রামীণ টেলিকম বলছে, সমঝোতা স্মারকের অন্যতম শর্ত ছিল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রামীণ টেলিকম থেকে সম্মিলিতভাবে ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা পাবেন। পুনরায় হিসাব করলে দেখা যায়, সঠিক হিসাব অনুযায়ী ৪০৯ কোটি ৬৯ লাখ ২২ হাজার ৭৮৯ টাকা পাবেন তারা। শ্রমিক ইউনিয়নও এই হিসাবটি সঠিক বলে মেনে নেয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এই টাকা নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে হস্তান্তর করা হয়। 

দুদক কোনো প্রমাণ ছাড়াই এই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করছে। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত, কাল্পনিক ও সর্বৈব মিথ্যা।

দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকম থেকে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা অতিরিক্ত প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী সমঝোতার জন্য নির্ধারিত মোট টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে হস্তান্তরের পর পুনরায় হিসাবের মাধ্যমে মোট প্রদেয় টাকার পরিমাণ কমে যায়। 

অর্থ গ্রহণের আগে সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদের প্রাপ্য টাকা থেকে ৬ শতাংশ তাদের মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীদের ফি ও বিবিধ খরচ বাবদ ইউনিয়নকে দিতে লিখিত অঙ্গীকারনামা দিয়েছে।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম