ডেঙ্গুজ্বর সারার পর প্রথম তিন দিন বিপজ্জনক
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৩ পিএম
ডেঙ্গু জ্বরের গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন রোগীর জ্বর ছেড়ে যায়। জ্বর ছাড়ার পরবর্তী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা (তিনদিন) ক্রিটিক্যাল সময়। কারণ এসময় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট ডিলেমা’ শীর্ষক মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনারে এই তথ্য জানানো হয়।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের এ-ব্লক মিলনায়তনে সেন্ট্রাল সেমিনার সাব-কমিটি এই আয়োজন করে।
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেসা ‘ডাইনামেকিস অব ডেঙ্গু ভাইরাস ইন বাংলাদেশ এন্ড ডেঙ্গু ভ্যাকসিন আপডেটস’, শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাহবুব মোতানাব্বি ‘ক্লিনিক্যাল প্রেসেন্টেশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট অব ডেঙ্গু: প্যাডেয়াট্রিক অ্যাসপেক্ট’, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বী চৌধুরী ‘ম্যানেজমেন্ট অব ডেঙ্গু ইনফেকশন : টিপস অ্যান্ড ট্যাকটিস’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ মতামত প্রদান করেন।
সেমিনারে বলা হয়, ডেঙ্গু জ্বরের বিপজ্জনক উপসর্গ হলো- অনবরত বমি হওয়া, রক্তক্ষরণ হওয়া, তীব্র দুর্বলতা অনুভব করা, তীব্র পেট ব্যাথা, ফুসফুসে পানি জমা ও তীব্র শ্বাসকষ্ট। এছাড়া গর্ববতী মা, ক্যানসার রোগী, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা ডেঙ্গু রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। তবে ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলেও রক্ত পরিসঞ্চালনের কোনো প্রয়োজন নেই। সঞ্চালন করলে হোল ব্লাড সঞ্চালন করা উচিত।
শুধু প্লাটিলেট নয়। ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর রক্তচাপ কমে গেলে, তা রেফার করা ঠিক নয়। ডেঙ্গু শক ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে ম্যানেজ করতে হয়। রক্তচাপ কমের রোগীকে রেফার করলে পথেই রোগী খারাপ হতে পারে। সুতরাং ডেঙ্গু শকের রোগীকে রেফার না করে ওই হাসপাতালেই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরে আলাদা করে ডাব, পেপে পাতা, পেপের জুস, ড্রাগন ফল, বেদানা ইত্যাদি খাওয়ার প্রয়োজন নেই। ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন নেই। সিবিসি টেস্টই যথেষ্ট। সিবিসি টেস্টের মধ্যে ডব্লিউবিসি নিপ কাউন্ট এবং হেমাটোক্রিট (এইচসিটি) কাউন্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সেমিনারে আরও বলা হয় ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের বাইরে থেকে স্বাভাবিক মনে হলেও যেকোন সময় শিশুরা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে চলে যেতে পারে। তাই যথাযথ মনিটরিং করতে হবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বিএসএমএমইউ ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় দেশ সেরা। তবে ডেঙ্গু চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা শুধু যে মেডিসিনি বিভাগের চিকিৎসকরা করবেন এমন নয়। বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের এতে সম্পৃক্ত হতে হবে। সাধারণ মানুষ প্লাটিলেট কমলে তারা চিকিৎসককে রক্ত দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেন।
১০ হাজারের নিচে প্লাটিলেট নামলে রক্ত দিতে হবে কি না সেটি চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন। কোনো অবস্থায় চিকিৎসা প্রটোকল ভাঙ্গা যাবে না। প্রটোকোল অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে।
ডেঙ্গুর চিকিৎসায় ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টে যথাযথ সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে। কারণ ওভার ফ্লুইড এবং ফ্লুইডের অভাব রোগীর জন্য ক্ষতিকর। এমন কি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।