অর্থ পাচারে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জরুরি: টিআইবি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৫ পিএম
দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা টান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, অর্থ পাচারে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। রপ্তানি-আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের (সিআইআইডি) প্রতিবেদনের পর এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে সংস্থাটি।
সিআইআইডির উদ্ধৃতি দিয়ে মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়, ৩৩টি তৈরি পোশাক কারখানা ও বায়িং হাউজ গত ছয় বছরে কমপক্ষে ৮২১ কোটি টাকা পাচার করেছে। এর পরই বিবৃতি দিল টিআইবি।
বিবৃতিতে সিআইআইডি-এর এ ধরনের কাজকে সতর্ক সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি ‘হিমশৈলের চূড়া’ উল্লেখ করে টিআইবি। অর্থ পাচারের ঘটনার আরও গভীর ও বিস্তৃত তদন্তসাপেক্ষে অনুকম্পা বা ভয়ের ঊর্ধ্বে থেকে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ ঘটনা প্রমাণ করে, বাণিজ্যভিত্তিক অর্থ পাচারের ঘটনা খুঁজে বের করে তা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রয়েছে। তবে ৮২১ কোটি টাকা পাচারের ঘটনা আসলে হিমশৈলের চূড়া মাত্র। কারণ গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) প্রকাশিত ২০১৮ সালের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমানে তা হাজার কোটি ডলার হবে। অথচ সরকার বৈদেশিক মুদ্রা সংকট মোকাবিলায় আইএমএফ থেকে সাড়ে তিন বছরের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে।
তিনি বলেন, অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ হলে বাংলাদেশকে আইএমএফের কাছে যেতে হতো না। তেমনি দেশে তৈরি হতো না রিজার্ভ সংকট। অর্থ পাচার রোধের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানকে জনস্বার্থের প্রতি প্রদ্ধাশীল হয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো ও তাদের সদস্যদের শুদ্ধাচার চর্চায় উদ্যোগী হওয়া জরুরি। অন্যদিকে দেশে অনেক সময়ই অর্থ পাচারের ঘটনা উন্মোচন হলেও জড়িত ব্যক্তিরা পরিচয় ও অবস্থানের বলে পার পেয়ে যান। বিত্তশালী, রাজনৈতিক আনুকূল্য বা অন্যভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। হতাশাজনকভাবে সম্প্রতি যার দৃষ্টান্ত দেখতে হয়েছে। তিনি বলেন, ৮২১ কোটি টাকা পাচারের ঘটনায় যাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উত্থাপিত হলো, তাদের ক্ষেত্রে এর পুনরাবৃত্তি হবে না-দেশবাসীর এই প্রত্যাশা। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারলে, জড়িতদের শাস্তির পাশাপাশি পাচার করা অর্থ বিদেশ থেকে ফেরত আনা সম্ভব। না হলে এ ধরনের অপরাধ আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে।
তিনি আরও বলেন, পাচার রোধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। অনেক অপরাধের তদন্ত দুদকের এখতিয়ার থেকে সরিয়ে নেওয়ায় প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। ফলে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা ২০১৯ সংশোধন করে দুদকের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।