যেভাবে বেরিয়ে এলো কাস্টমসের সোনা চুরির ঘটনা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৫০ পিএম
রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুল্ক বিভাগের ভল্ট থেকে ৫৫ কেজির বেশি সোনা চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে। শুল্ক বিভাগ জানায়, চুরি যাওয়া এ সোনার মূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।
রোববার রাতে ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সোনা চুরির এ ঘটনা ঢাকা শুল্ক বিভাগের নজরে আসে গত শনিবার। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় গতকাল রোববার। এ ঘটনায় শুল্ক বিভাগ একজন যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মাসুদ রানা যুগ্ম কমিশনারকে বিমানবন্দরের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ শাখার কাছে শুল্ক বিভাগের গুদামের মূল্যবান পণ্যসামগ্রী রাখার একটি স্টিলের আলমারির লকার ভাঙা বলে জানান।
মাসুদ রানা যুগ্ম কমিশনারকে আরও জানান, প্রতিদিনের মতো আটক পণ্য গুদামে রেখে তিনিসহ চারজন রাত সাড়ে ১২টার দিকে শুল্ক বিভাগ ছেড়ে চলে যান।
মামলায় আরও বলা হয়েছে, গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন সংবাদ পেয়ে ওই গুদাম পরিদর্শনে যান ঢাকা শুল্ক বিভাগের কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনার। তারা গিয়ে গুদামের একটি স্টিলের আলমারির লকার ভাঙা দেখেন। গুদামের পূর্ব পাশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের বাতাস যে অংশ দিয়ে বের হয়, সেখানকার টিনের কিছু অংশ কাটা দেখতে পান। পরে তারা গুদামের দায়িত্বে থাকা চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন সিপাহিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোনো সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে শুল্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গুদাম থেকে কোনো মূল্যবান বস্তু চুরি হয়েছে কিনা, সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশনা দেন।
পরে গুদাম কর্মকর্তারা আটকের রসিদ (ডিএম) মোতাবেক দেখতে পান ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে আটক ৫৫ কেজি ৫১ গ্রাম সোনা চুরি হয়েছে।
রাত সাড়ে ৯টা থেকে পর দিন সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে কে বা কারা গুদামের আলমারির লকার ভেঙে সোনাগুলো নিয়ে গেছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।
পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চুরির ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। এ চুরির রহস্য উদ্ঘাটনে গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
বিমানবন্দরের ভেতরের ওই গুদামের দায়িত্ব পালন করেন চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন সিপাহি। তাদের মধ্যে চার সরকারি রাজস্ব কর্মকর্তারা হলেন মাসুদ রানা, সাইফুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও আকতার শেখ। অন্য চারজন সিপাহি হলেন রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদার।
শুল্ক বিভাগের ভাষ্য অনুযায়ী, চুরি হওয়া এসব সোনা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু এত দিন ধরে এত পরিমাণ সোনা বিমানবন্দরের গুদামে রাখা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার একেএম নুরুল হুদা আজাদ বলেন, গুদামে অনেকগুলো লকার থাকলেও সোনা চুরি হয়েছে একটি লকার থেকে। এসব সোনা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে। আমি গুদামে অটোমেশনের কাজ শুরু করি। এর মধ্যে এ ধরনের ঘটনায় আমি লজ্জিত ও বিব্রত।
এ কর্মকর্তা জানান, আট দিন আগে গুদামটি অটোমেশনের কাজ শুরু হয়। এই কাজের অংশ হিসেবে গুদামে থাকা সোনা গণনার কাজ শুরু হয়। তার ধারণা, সোনা চুরির ঘটনা আগেই ঘটেছে। গুদামের অটোমেশনের কাজ শুরু হওয়ায় সেটা ধরা পড়বে; তাই লকার ভাঙার ‘নাটক’ তৈরি করা হয়েছে।
বিমানবন্দরের ভেতরের সব জায়গা সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারিসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়। পুরো বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারি বেশ কয়েকটি সংস্থা কাজ করে। এত নিরাপত্তার মধ্যে গুদাম থেকে সোনা চুরি হওয়ার বিষয়টি বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
এ বিষয়ে পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, বিমানবন্দর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই)। এমন একটি জায়গা থেকে কিছু চুরি হলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। সোনা চুরির ঘটনায় পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। তদন্ত করে এ ঘটনায় কারা জড়িত, সেটা বের করা হবে।