Logo
Logo
×

জাতীয়

এমটিএফই’র ফাঁদ: প্রতারিতদের তথ্য দিতে সিআইডির অনুরোধ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১০:১৩ পিএম

এমটিএফই’র ফাঁদ: প্রতারিতদের তথ্য দিতে সিআইডির অনুরোধ

ঘরে বসে বিনিয়োগ করে দ্রুত ধনী হওয়ার লোভ দেখিয়ে দেশের কয়েক লাখ মানুষের কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ‘এমটিএফই’। কানাডা ও দুবাইভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটির ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়া মানুষ লোকলজ্জার ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না।

এ অবস্থায় এমটিএফই প্রতারণায় জড়িতদের বিষয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টারে তথ্য পাঠাতে ভুক্তভোগীদের অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। শুক্রবার সিআইডি সদর দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানানো হয়। 

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই এমটিএফই সফটওয়্যারের ডিজাইন করার সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং বাংলাদেশে অবৈধ অ্যাপসটির মার্কেটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ২০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের আটক করতে যে কোনো সময় অভিযান শুরু হতে পারে। তবে ভুক্তভোগীদের কেউ মামলা বা অভিযোগ না করলে ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। এজন্যই ভুক্তভোগীদের অভিযোগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে বলে সিআইডির সাইবার পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।

সিআইডি জানায়, মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্র“প ইনকরপোরেটেড (এমটিএফই) অ্যাপসের মাধ্যমে গ্রাহকদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়। এই অ্যাপে গ্রাহকদের লেনদেন পরিচালনা করা হয়। নিজেদের ছায়া প্ল্যাটফর্মে ট্রেড করার সুযোগ দিয়ে এই অ্যাপ সম্প্র্রতি আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।  

বাংলাদেশে এমটিএফই’র কোনো অফিস না থাকলেও গত জানুয়ারিতে এর কার্যক্রম শুরু হয়। ঘরে বসে সহজে আয়ের পথ বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক-ইউটিউবে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। ভিডিও ও বিজ্ঞাপনগুলো দেখে ভুক্তভোগীরা আগ্রহী হন। সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হন একজন আরেকজনকে দেখে। এক্ষেত্রে রেফারেল বা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি কাজ করে। এমটিএফই এমএলএম পদ্ধতিতে কাজ করেছে। বেশি লাভের আশায় লাখ লাখ মানুষ অ্যাপসটিতে বিনিয়োগ করেছে। কিছু মানুষ অবশ্য লাভের অংশ পেয়েছেও। তবে চূড়ান্ত বিচারে বিনিয়োগের সব অর্থই খোয়াতে হয় গ্রাহকদের।

ঢাকাসহ বরিশাল, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সাতক্ষীরাতে প্রতারণা সবচেয়ে বেশি হয়েছে। সিআইডির ধারণা, সারা দেশে চার থেকে পাঁচ লাখ গ্রাহক এমটিএফই’র মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা খুইয়েছেন।

গুগল প্লে-স্টোর থেকে যে কেউ এমটিএফই অ্যাপসটি ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করতে পারতেন। রেজিস্ট্রেশনের পর তাদের নিজস্ব ওয়ালেটে ট্রেড করার জন্য ডলার রাখতে হতো। ডলারের পরিমাণ অনুযায়ী তাদের প্রতিনিয়ত প্রলোভন দিয়ে লাভের কথা বলা হতো।

৫০০ ডলার বিনিয়োগ করলে দিনশেষে পাঁচ হাজার টাকা লাভ হবে-এমন কল্পিত মুনাফার কথাও বলা হতো। ভার্চুয়ালি ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ডলার কেনাবেচা করা হলেও লভ্যাংশ দেওয়া হতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, শুধু এমটিএফই নয়, দেশে এখনো সক্রিয় আছে অনিবন্ধনকৃত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনভিত্তিক এ ধরনের প্রতারক চক্র। যেখানে বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, এমএলএম ব্যবসা এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন অবৈধ ও নিষিদ্ধ। অ্যাপস ও অনলাইনভিত্তিক যে কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগকারীদের এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতনতার দরকার।

সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স টিম এ ব্যাপারে নজরদারি করছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা প্রতারকচক্রের তথ্য ও অভিযোগ জানাতে সিআইডির সাইবার সাপোর্ট সেন্টারে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

রাজশাহীতে গ্রেফতার দুজনের রিমান্ড আবেদন : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, এমটিএফই অ্যাপ ব্যবহার করে অর্থ আÍসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে রাজশাহীতে গ্রেফতার দুজনের ১৫ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। বিচারক ২৭ আগস্ট রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বুধবার রাতে এই দুজনকে গ্রেফতার করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা। গ্রেফতার দুজন হলেন-নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার মহাদেবপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে লতিফুর বারী বাবু (৪২) এবং রাজশাহীর মোহনপুরের বিষহারা গ্রামের দিজেন্দ্রনাথ সাহার ছেলে দিপেন্দ্রনাথ সাহা (৪৩)। দিপেন্দ্রনাথ মোহনপুর উপজেলার খালমগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। গ্রেফতার বাবু ও দিপেন্দ্রনাথ এমটিএফই’র শীর্ষ পদে ছিলেন। 

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, এমটিএফই অ্যাপ ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে ২৩ জুলাই আদালতে একটি মামলা হয়। আদালতের নির্দেশে ওই মামলা রাজপাড়া থানায় রেকর্ড করে তিনটি সংস্থা তদন্ত করছে। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারদের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আমরা এর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আশা করছি খুব দ্রুত তাদের পেয়ে যাব।


 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম