চাচা-ভাতিজাকে হত্যা: ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড দুইজনের যাবজ্জীবন
আদালত প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৩, ১০:২৭ পিএম
চার বছর আগে ফরিদপুরের নগরকান্দা থানার মধ্যকাইচাইল মাদরাসা মসজিদে চাচা রওশন আলী ও তার ভাতিজা মিরাজুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড ও দুইজনের যাবজ্জীবন সাজার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক জেসমিন আরার আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। মামলায় চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। তবে নির্দোষ সাব্যস্ত হওয়ায় ৬ জনের বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- হানিফ ওরফে হৃদয়, কাইয়ুম মিয়া ও এনামুল হাসান মিয়া। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি তাদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। রায়ে আসামি আউয়াল মোল্লা ও রেজাউল মাতুব্বরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। পাশাপাশি তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- পারভেজ মিয়া, হাফিজুর রহমান ওরফে তুষার মিয়া, তুহিন মিয়া, রবিউল ইসলাম ওরফে মশিউর মিয়া, এম রাজু আহমদ ওরফে কোরবান মিয়া ও শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ মিয়া।
রায়ে বলা হয়েছে, আসামি দুলাল মিয়ার দুই ধারায় ১০ বছর ও সাত বছর করে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে উভয় সাজা একত্রে চলবে। পাশাপাশি দুই ধারায় মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আসামি হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব মিয়ার সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
আসামি রিকুল ইসলাম ওরফে রবিন শিকদারের এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আসামি পাঁচু মিয়ার তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের সাজা ভোগ করতে হবে।
এর আগে ১৩ আগস্ট ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক জেসমিন আরার আদালতে এ রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য ছিল। ওই দিন দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক অসুস্থ থাকায় ভারপ্রাপ্ত বিচারক আলী আহমেদ রায় ঘোষণার জন্য ২০ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
২০১৯ সালের ১০ আগস্ট নগরকান্দার মধ্যকাইচাইল মাদরাসা মসজিদে রওশন আলী ও মিরাজুল ইসলাম তুহিনসহ অন্যরা আসরের নামাজ শেষে বের হয়ে মাদরাসা মাঠে আসেন। সেখানে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আসামি আউয়াল মোল্লা ও হানিফ মিয়া ওরফে হৃদয়সহ অন্য আসামিরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করেন।
আসামি আউয়াল মোল্লার হুকুমে আসামি হানিফ মিয়া ওরফ হৃদয়সহ অন্য আসামিরা তাদের সঙ্গে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র ও শর্টগান দিয়ে উপর্যুপুরি গুলি করেন। এতে ঘটনাস্থলেই রওশন আলী ও মিরাজুল ইসলাম তুহিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন গোলাম রসুল বিপ্লব, গোলাম মাওলাসহ আরও সাত-আটজন।
এ ঘটনায় নগরকান্দা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। মামলার তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২২ জুলাই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। এরপর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইবুন্যাল-১ এ পাঠানো হয়। পরে মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল-৪ এ বদলি করা হয়। মামলার বিচার চলাকালীন আদালত ৩৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
এ মামলার ১৬ জন চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিলেন। তারা হলেন- আউয়াল মোল্লা, হানিফ ওরফে হৃদয়, এনামুল হাসান মিয়া, রেজাউল মাতুব্বর, কাইয়ুম মিয়া, রিকুল ইসলাম ওরফে রবিন শিকদার, দুলাল মিয়া, হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব মিয়া, পাঁচু মিয়া, পারভেজ মিয়া, আসাদুজ্জামান সিকদার, হাফিজুর রহমান ওরফে তুষার মিয়া, তুহিন মিয়া, শহিদুল ইসলাম ওরফে শহিদ মিয়া, কে এম রাজু আহমদ ওরফে কোরবান মিয়া, রবিউল ইসলাম ওরফে মশিউর মিয়া, রওশন আলী ও মিরাজুল ইসলাম।
এ মামলার প্রধান আসামি আউয়াল জামিনে ছিলেন; কিন্তু রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত না থাকায় তাকে পলাতক দেখিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়। আসাদুজ্জামান নামের এক আসামি মারা গেছেন। আসামি পাঁচু মিয়া, রাজু ও রবিউল এখন কারাগারে। মামলার শুরু থেকে আসামি এনামুল, পারভেজ, হাফিজুর, তুহিন ও শহিদুল পলাতক রয়েছেন। এছাড়া জামিনে গিয়ে আসামি হৃদয়, রেজাউল, কাইয়ুম, রবিন, দুলাল ও হাবিবুর এখন পলাতক।