Logo
Logo
×

জাতীয়

যেভাবে যুক্ত হবেন সর্বজনীন পেনশন স্কিমে 

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৩, ০৬:৩৩ পিএম

যেভাবে যুক্ত হবেন সর্বজনীন পেনশন স্কিমে 

এখন পর্যন্ত সরকারি চাকরিজীবীরা পেনশন সুবিধা পাচ্ছেন। এ নিয়ে আক্ষেপ ছিল বেসরকারি চাকুরেদের। এই আক্ষেপ ঘুচাতে যাচ্ছে সরকার।  

দেশের মানুষের জন্য চার ধরনের পেনশন স্কিমের বিধান রেখে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা জারি করেছে সরকার।

১৪ আগস্ট অর্থ বিভাগ থেকে জারি হওয়া এই বিধিমালায় ‘প্রবাস’ ‘প্রগতি’, ‘সুরক্ষা’ ও ‘সমতা’ নামে পেনশন স্কিম চালুর কথা বলা হয়েছে। চার ধরনের স্কিমে আলাদা আলাদা সুবিধা রয়েছে। বিধিমালা মেনে যে যার সুবিধামতো স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।

১৭ আগস্ট বহুলপ্রতিক্ষীত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধন। 

চার ধরনের পেনশন স্কিমের মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবাস স্কিম, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য প্রগতি স্কিম, স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম এবং স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প-আয়ের নাগরিকদের জন্য সমতা স্কিম চালু হচ্ছে। 

এসব স্কিমের চাঁদার কিস্তি পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা যাবে। চাঁদা দেওয়ার সময়ের ভিত্তিতে চারটি স্কিমের জন্যই মাসিক চাঁদার পরিমাণ এবং পেনশনের পরিমাণ আলাদা আলাদাভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

যোগ্যতা ও নিবন্ধন

বিধিমালায় বলা হয়েছে, ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সি জাতীয় পরিচয়পত্রধারী সব বাংলাদেশি নাগরিক তাদের জন্য প্রযোজ্য কোনো স্কিমে অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন।

তবে শর্ত রয়েছে, বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সের নাগরিকরা স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে স্কিমে অংশ নেওয়ার তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা দেওয়া শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন সেই বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন।

প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা তাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে পারবেন।

তবে শর্ত রয়েছে, সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে তার অনুলিপি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে।

শর্তের মধ্যে আরও রয়েছে, নিয়মিতভাবে পাসপোর্ট নবায়ন বা পুনঃইস্যুর ক্ষেত্রে নবায়নকৃত বা পুনঃইস্যুকৃত পাসপোর্টের অনুলিপি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিরাও তাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। তাদের ক্ষেত্রে শর্তের মধ্যে রয়েছে- স্কিমে অংশ নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা সমর্পণ করতে হবে।

কোনো স্কিমে নিবন্ধনের জন্য দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিক নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূরণ করে আবেদন করতে হবে। যার বিপরীতে আবেদনকারীর অনুকূলে একটি ইউনিক আইডি নম্বর দেওয়া হবে।

আর সব ক্যাটাগরির আবেদনে আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে এবং অনিবাসী আবেদনকারীর ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ই-মেইলের মাধ্যমে ইউনিক আইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা প্রদানের তারিখ জানানো হবে।

স্কিম উদ্বোধনের দিন বৃহস্পতিবার ‘ইউপেনশন’ নামক ওয়েবসাইটও উদ্বোধন করা হবে এবং এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ওই দিন থেকেই যে কেউ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।

চার স্কিমের বিস্তারিত

প্রবাস স্কিম

অর্থ বিভাগ থেকে জারি হওয়া এই বিধিমালায় বলা হয়েছে, বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানরত যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক নির্ধারিত অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় জমা দিয়ে এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।

দেশে ফিরে সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করা যাবে। প্রয়োজনে স্কিমও পরিবর্তন করতে পারবেন প্রবাসীরা।

প্রবাসীদের মধ্যে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা পাসপোর্টের তথ্য-উপাত্ত দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে সেটির অনুলিপি পেনশন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। নিয়মিতভাবে পাসপোর্ট নবায়ন বা পুনঃইস্যুর ক্ষেত্রে নবায়নকৃত বা পুনঃইস্যুকৃত পাসপোর্টের অনুলিপি জমা দিতে হবে।

চাঁদা ও সুবিধা

প্রবাস স্কিমে মাসিক ৫ হাজার কিংবা সাড়ে ৭ হাজার কিংবা ১০ হাজার টাকা কিস্তি দিয়ে যুক্ত হওয়া যাবে। ১০ বছর পূর্তিতে ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে মাসে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা হারে। সাড়ে ৭ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ১১ হাজার ৪৭৭ এবং ১০ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ১৫ হাজার ৩০২ টাকা পাওয়া যাবে। এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। ৪২ বছর পূর্ণ হলে ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা, সাড়ে ৭ হাজার টাকার কিস্তিতে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৯১ টাকা এবং ১০ হাজার টাকার কিস্তিতে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা।

প্ৰগতি স্কিম

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য এই স্কিম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী বা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক এতে অংশ নিতে পারবেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের জন্য এই স্কিমে অংশ নিলে স্কিমের চাঁদার ৫০ শতাংশ কর্মচারী এবং বাকি ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে।

কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই স্কিমে অংশ না নিলে সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নিজ উদ্যোগে একাই এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।

চাঁদা ও সুবিধা

প্রগতি স্কিমে মাসে ২ হাজার কিংবা ৩ হাজার কিংবা ৫ হাজার টাকা কিস্তি দিয়ে যুক্ত হওয়া যাবে। ১০ বছর পূর্তিতে ২ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে মাসে ৩ হাজার ৬০ টাকা হারে। ৩ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ৪ হাজার ৫৯১ এবং ৫ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা পাওয়া যাবে। এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। ৪২ বছর পূর্ণ হলে ২ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা, ৩ হাজার টাকার কিস্তিতে ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ টাকা এবং ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা।

সুরক্ষা স্কিম

বিধিমালায় বলা হয়েছে, অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেল, তাঁতিরা এই স্কিমে অংশ নিতে পারবে।

চাঁদা ও সুবিধা

বিধিমালায় বলা হয়েছে, সুরক্ষা স্কিমে মাসিক ১ হাজার কিংবা ২ হাজার কিংবা ৩ হাজার কিংবা ৫ হাজার টাকা কিস্তি দিয়ে যুক্ত হওয়া যাবে। ১০ বছর পূর্তিতে ১ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে মাসে ১ হাজার ৫৩০ টাকা হারে। ২ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ৩ হাজার ৬০, ৩ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে ৪ হাজার ৫৯১ টাকা এবং ৫ হাজার টাকা কিস্তিতে মাসে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা পাওয়া যাবে। এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। ৪২ বছর পূর্ণ হলে ১ হাজার টাকার কিস্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ৩৪ হাজার ৫৬৫ টাকা, ২ হাজার টাকার কিস্তিতে ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা, ৩ হাজার টাকার কিস্তিতে ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ টাকা এবং ৫ হাজার টাকার কিস্তিতে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা।

সমতা স্কিম

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক সময় সময় প্রকাশিত আয় সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা (যাদের বর্তমান আয়সীমা বছরে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা) এই স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।

চাঁদা ও সুবিধা

সমতা স্কিমে মাসিক ১ হাজার টাকা কিস্তি দিয়ে যুক্ত হতে হবে। ১০ বছর পূর্তিতে মাসে পেনশন পাওয়া যাবে মাসে ১ হাজার ৫৩০ টাকা হারে। এভাবে ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫, ৪০ ও ৪২ বছর পূর্ণে পেনশনের হারও বাড়বে। ৪২ বছর পূর্ণ হলে প্রতি মাসে পেনশন পাওয়া যাবে ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা হারে।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, এসব স্কিমের বিপরীতে নির্ধারিত পরিমাণ চাঁদা দিলে মাসিক পেনশন পাওয়ার প্রাপ্যতা অর্জিত হবে।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২৪ জানুয়ারি সব নাগরিককে পেনশনের আওতায় আনতে সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাশ হয়। বিলে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সি সব নাগরিকের নির্ধারিত হারে চাঁদা পরিশোধ করে ৬০ বছর পূর্তির পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করার বিধান রাখা হয়। এছাড়া বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সিরাও এ আইনের আওতায় নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করে পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা প্রদান শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন, সে বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন। আজীবন বলতে পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম