সপ্তমবারও ওয়াসার এমডি পদে চুক্তিতে নিয়োগ পাচ্ছেন তাকসিম এ খান

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৩, ১২:৪৩ এএম

তাকসিম এ খান। ফাইল ছবি
নাগরিক সেবার মান নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে পড়া ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে আরো তিন বছরের জন্য নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন তাকসিম এ খান। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ওয়াসার বোর্ড সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ওয়াসার বোর্ডের একাধিক সদস্য গণমাধ্যমকে বলেন, তাকসিম এ খানের মেয়াদ আরো তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব বোর্ড সভায় পাস হয়েছে। প্রস্তাবটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে যাবে। সেখান থেকে প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে নিয়োগ চূড়ান্ত হবে।
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেয়েছিলেন তাকসিম এ খান। এরপর পাঁচ দফায় তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ১৪ অক্টোবর তার ষষ্ঠবারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
গত ১২ বছরে তাকসিম এ খানের মাসিক বেতন বেড়েছে ৪২১ শতাংশ। ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে তাকসিমের মাসিক বেতন বর্তমানে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সর্বশেষ করোনা মহামারির মধ্যে এক লাফে ওয়াসার এমডির বেতন বাড়ানো হয় পৌনে ২ লাখ টাকা। তাকসিম এ খান, তার স্ত্রী ও সন্তানেরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা অভিযোগ থাকার পরও ঢাকা ওয়াসা বোর্ড কেন তাকসিমকে একই পদে রাখার প্রস্তাব করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সভাপতি আকতার মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ওয়াসার পানি সরবরাহে উন্নতি হলেও কোনো টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থাতেও সফলতা নেই। তাকসিম এ খান এমন অসাধারণ কিছু করেননি, যাতে তাকে আরো তিন বছর একই পদে রাখতে হবে। প্রথাগতভাবেও একজনের একই পদে দীর্ঘদিন থাকা উচিত নয়। এতে অন্যদের পথ রুদ্ধ হয় এবং নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয় না।
ঢাকা ওয়াসা পরিচালিত হয় ১৯৯৬ সালে পাস হওয়া ওয়াসা অ্যাক্ট অনুযায়ী। এ আইনে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হচ্ছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ওয়াসা বোর্ডের প্রস্তাব বা সুপারিশ অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই পদে নিয়োগ দেয় সরকার। কিন্তু একই ব্যক্তি একই পদে সর্বোচ্চ কতবার বা কত বছর নিয়োগ পেতে পারেন, এ বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই। ফলে ২০০৯ সালে প্রথম দফায় নিয়োগ পাওয়ার পর আর পদ ছাড়তে হয়নি তাকসিম এ খানকে।
নতুন করে তার মেয়াদ বৃদ্ধির সুপারিশের সমালোচনা করে ঢাকা ওয়াসা কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমকে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে তাকসিমের একাধিক দুর্নীতির মামলা চলমান। এমন অবস্থায় বিধিমোতাবেক তাকসিমের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করতে পারে না ওয়াসা বোর্ড। এটা অনৈতিক এবং দুর্নীতির সহায়ক।
বৈঠকে অংশ নেওয়া ওয়াসার একজন বোর্ড সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, তাকসিম এ খানের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে জোরালো সুপারিশ করেন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুজিত কুমার বালা। বোর্ডের সদস্যদের তাকসিমের গুরুত্ব ও দক্ষতা বোঝানোর চেষ্টা করেন। একাধিক বোর্ড সদস্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নতুন এমডি নিয়োগের কথা তুলেছিলেন। কিন্তু চেয়ারম্যান বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে বর্তমান এমডির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে কথা বলেছেন।