যে কারণে প্রান্তিক গোষ্ঠীর খাদ্য ও জ্বালানি সংকট
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৩, ১০:১০ এএম
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। ফাইল ছবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বে খাদ্য, জ্বালানি ও সারের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে। এতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্য ও জ্বালানির সংকট দেখা দিয়েছে। রোববার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা-একশনএইডের এক সমীক্ষায় এসব কথা বলা হয়েছে।
সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক প্যারামিটারে বেড়েছে, যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যুদ্ধকালীন সময় বাংলাদেশে সারের দাম ১০৫ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি চিনির দাম ৬০ শতাংশ, পেট্রোলের দাম ৪৭ শতাংশ এবং স্যানিটারি প্যাডের দাম ২৩ শতাংশ বেড়েছে। ফলে দেশের জনগণ একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে- নারী, মেয়ে ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের শিক্ষা, পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে আপস করতে হচ্ছে।
১৪টি দেশের মোট ১০১০ জন মানুষের মধ্যে গত ১ মার্চ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত এ সমীক্ষা পরিচালিত হয়। এতে অংশ নেওয়া উত্তরদাতাদের ৬৩ শতাংশ ছিলেন নারী। জরিপে অংশ নেওয়া ১৪টি দেশ হলো- বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (ডিআরসি), ইথিওপিয়া, হাইতি, কেনিয়া, মালাউই, মিয়ানমার, নেপাল, নাইজেরিয়া, সিয়েরা লিওন, সোমালিল্যান্ড, জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের মধ্যে ১০টি দেশে মেয়ে ও ছেলে উভয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হার বেড়েছে। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চাপও বাল্যবিবাহের হার বাড়িয়ে দিয়েছে।
একশনএইডের গ্লোবাল পলিসি অ্যানালিস্ট আলবার্টা গুয়েরা বলেন, এ সমীক্ষায় দেখা যায় ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্বজুড়ে খাদ্য, জ্বালানি ও সারের আকাশছোঁয়া দামের কারণে প্রান্তিক মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষত নারী ও কন্যাশিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ সময় তারা নানা সংকটে প্রভাবিত হয়েছে, যা তাদের খাদ্য গ্রহণ, শিক্ষা, বাল্যবিবাহ থেকে মুক্ত থাকার অধিকার এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতাকেও প্রভাবিত করেছে।
সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ জলবায়ু বিপর্যয়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, কোভিড-১৯, ঋণের চাপ এবং মুদ্রার অবমূল্যায়ন থেকে শুরু করে একাধিক সংকটে রয়েছে।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, জ্বালানির দামের অস্থিরতা সব ক্ষেত্রেই সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে খাদ্যের ওপর, যা নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বেশি মাত্রায় প্রভাবিত করে।
যদি আমরা বাস্তব দৃষ্টিতে দেখি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এখন চাল ও ডিমের মতো প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর জন্য আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দাম দিতে হচ্ছে। ফলে মানুষের খাদ্যগ্রহণ মারাত্মকভাবে হ্রাস ঘটেছে। যা পুষ্টির ভারসাম্যকে প্রভাবিত করেছে। আমাদের এনার্জি খাতও অত্যন্ত জ্বালানিনির্ভর। তাই জ্বালানির অতিরিক্ত দাম আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভ এবং জাতীয় ব্যয়ের ওপর প্রভাব ফেলেছে।