সড়কপথে যানজট, বৃষ্টির ভোগান্তি নিয়েই গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৩, ০৮:২৯ এএম

রাত পোহালেই ঈদ। নাড়ীর টানে বাড়ি ছুটছে সবাই। গত কয়েকদিন ভোগান্তি ছাড়াই ঘরমুখো মানুষ গন্তব্যে পৌঁছেছে। তবে স্বস্তির ঈদযাত্রায় পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃষ্টি। তারপরও ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রায় একটুও ভাটা পড়েনি। ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকজন তল্পিতল্পা নিয়ে পথে নেমেছে। বৃষ্টির ভোগান্তির সঙ্গে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট উত্তরবঙ্গমুখী যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে।
সোমবার থেকে শুরু হওয়া যানযট সড়কে মঙ্গলবারও গাড়ি চলেছে ধীরগতিতে। গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে মানুষের প্রচুর ভিড় ছিল। ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথে গাবতলী ও আব্দুল্লাহপুর এলাকায় যানজটের কারণে দীর্ঘ সময় যাত্রীবাহী বাসগুলোকে আটকে থাকতে হয়েছে। সড়কপথে বাসের ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সব রুটেই যাত্রীদের দ্বিগুণ দামে বাসের টিকেট কিনতে হয়েছে। তবে নৌপথ ও রেলপথের যাত্রীরা বেশ স্বস্তি নিয়েই ঢাকা ছেড়েছেন।
রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে মানুষের ভিড় শুরু হয় মঙ্গলবার ভোর থেকেই।
এরপর বেলা যত গড়িয়েছে- যানবাহনের ভিড় বেড়েছে। বাসগুলো আসন পূর্ণ করার পর অতিরিক্ত যাত্রী গিয়ে ঢাকা ছাড়ছে। শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত যানজট ও সকালের বৃষ্টি ঈদযাত্রায় ভোগান্তি সৃষ্টি করে। বৃষ্টির কারণেও বিভিন্ন মহাসকের কোথাও কোথাও যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা তৎপর রয়েছেন।
বাস টার্মিনালে পরিবহন কোম্পানিগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক ক্ষেত্রে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। স্বাভাবিক সময়ে অভি পরিবহনের বাসে ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ যাওয়ার ভাড়া ৩৫০ টাকা। গাবতলী টিকেট কাউন্টারের লোকজন যাত্রীদের কাছ থেকে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ করেন শাহাদাত হোসেন। নওগাঁগামী যাত্রী ফারুক জানান, স্বাভাবিক সময়ে নওগাঁ যেতে ৭০০ টাকা ভাড়া দিতে হতো। গতকাল একই দূরত্বের জন্য ১৪০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। গাবতলী থেকে পাটুরিয়া আরিচা পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়ের ভাড়া ১৮০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকেও বাড়তি ভাড়ায় বিভিন্ন জেলার বাসগুলো যাত্রী তুলছে। তবে যারা এখনো অনলাইনে টিকেট কাটার সুযোগ পাচ্ছেন- তাদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে না। বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে বিআরটিএ তৎপর থাকার কথা বললেও সকালে কোনো বাসস্ট্যান্ডেই তাদের দেখা যায়নি। বাড়তি ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে অভিযোগ করারও কোনো জায়গা নেই যাত্রীদের।
ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট সৌরভ আহমেদ বলেন, সোমবার বিকাল থেকেই গাবতলীতে যাত্রীদের ব্যাপক চাপ শুরু হয়। একদিকে গাবতলী গরুর হাট, অপরদিকে দূরপাল্লার বাসের কারণে যানজট ও মানুষের ভিড়ে এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে রাস্তা ক্লিয়ার করার চেষ্টা করছি।
উত্তরার আব্দুল্লাপুরে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীবাহী বাসগুলোকে সড়কে চাপ থাকায় ধীরে ধীরে যেতে হচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে আব্দুল্লাপুর পার হতে আধঘন্টার বেশি সময় লাগছে বলে বাসচালকরা জানিয়েছেন।
এদিকে উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের ভোগান্তি যেন কমছেই না। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কে পুরো মাত্রায় যানবাহনের চাপ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের চাপ থাকলেও এই পথে বেশ স্বস্তি নিয়েই যাত্রীরা ঢাকা ছাড়ছে।
নৌপথের যাত্রীরা বেশ স্বস্তি নিয়ে ঈদযাত্রায় সামিল হয়েছেন। গতকাল বিকাল থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীর ভিড় বেড়েছে। তবে আগের তুলনায় যাত্রী কম থাকায় লঞ্চগুলো নির্ধারিত সময়ে ছাড়েনি। প্রায় সব লঞ্চই বেশি যাত্রী পাওয়ার জন্য নির্ধারিত সময়ের পরও টার্মিনাল ছাড়েনি। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল পরিদর্শন করেছেন।
ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের কুয়াকাটা-২ লঞ্চের মালিক আবুল কালাম খান জানান, ঈদ উপলক্ষে সব লঞ্চের কেবিন আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। এখন ডেকের যাত্রীরাই মূলত আসবেন। তবে আশানুরূপ যাত্রী নেই। অনেক অফিস মঙ্গলবারও খোলা ছিল। অফিস শেষে যাত্রীরা রওনা হবেন। এ কারণে সন্ধ্যা থেকে যাত্রীর চাপ বাড়বে।
সরজমিন কমলাপুর গেয়ে দেখা গেছে, ট্রেনে ঈদযাত্রার চতুর্থ দিন কমলাপুর রেলস্টেশনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়। সকালের দিকটার চেয়ে সন্ধ্যের দিকে ভিড় বেশি ছিল। তবে টিকেটবিহীন যাত্রীদের ক্ষেত্রে এবার কড়াকড়ি থাকায় কোনো যাত্রী বাঁশের বেড়ার ফাঁক দিয়ে বিনা টিকেটে স্টেশন এলাকায় প্রবেশ করতে পারেনি। যদিও এরই মধ্যে ফাঁকফোকর গলে এবং খিলগাঁও রেলক্রসিং দিয়ে অসংখ্য মানুষ ঢুকছে স্টেশন চত্বরে। এদের অধিকাংশই টিকেটবিহীন যাত্রী- যার ফলে ভেতরে টিকেটধারী যাত্রীরা মহাসমস্যায় পড়েছেন, তাদের ঘাড়ের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের চাপ। অনেকেই প্রয়োজনে ভিড় ঠেলে বাথরুমে না যেতে পারার অভিযোগ করেছেন। সকালের দিকে বেশ কয়েকটি ট্রেন ১ থেকে দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে যায়।