হলি আর্টিজান হামলা
সাত জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর কতদূর
বিচারিক আদালতে রায়ের পর হাইকোর্টে আছে সাড়ে তিন বছর সুপ্রিমকোর্ট পার হতে লাগতে পারে ৪-৫ বছর
আলমগীর হোসেন
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৩, ০৯:৩৬ এএম
রাজধানীর হোলি আর্টিজানে অভিযান। ফাইল ছবি
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার সাত বছর পূর্ণ হবে পহেলা জুলাই। সাড়ে তিন বছর আগে সাত জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। দীর্ঘ অপেক্ষার পর গেল মাসে ডেথ রেফারেঞ্জের ওপর শুনানিও শুরু হয়েছে। তবে বিচার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যদি ধরেও নিই এ বছর হাইকোর্টের ধাপ শেষ হবে, তবু সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে ৪-৫ বছর লাগতে পারে। ফলে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির রায় কার্যকর হতে এখনো অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।
সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ যুগান্তরকে বলেন, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি। কারণ সুবিচার পেতে বিলম্ব হওয়ার অর্থই হলো সুবিচার না পাওয়া। মামলাজট এখন ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বড় বাধা। ‘জাস্টিস ডিলে জাস্টিস ডিনাই।’ সুশাসনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধা। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে রিট ফাইল করেছিলাম। আদালত রুল জারি করেছেন। তিনি বলেন, ডেথ রেফারেন্স মামলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মামলার পেপারবুক সময়মতো প্রস্তুত না করা। এছাড়া পর্যাপ্ত বিচারক ও বেঞ্চ বাড়ানো প্রয়োজন। আইনজীবীরা জানান, গত ১৪ মে হাইকোর্টে এ মামলার ডেথ রেফারেন্স শুনানি শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ প্রথমে রায়ের পার্ট পড়ে শোনান। এরপর উভয়পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। সর্বশেষ ১৪ জুন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়। পরে দ্বিতীয় বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান হজ পালন করতে বিদেশে গেলে বেঞ্চটি ভেঙে যায়। নিয়মানুযায়ী তিনি দেশে ফিরে যোগদান করলে ওই বেঞ্চেই ফের যুক্তিতর্ক শুরু হবে বলে তারা জানান।
এ প্রসঙ্গে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী যুগান্তরকে বলেন, হাইকোর্টে হলি আর্টিজান হামলার মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা এবং আপিল শুনানি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে মামলাটির হাইকোর্টের ধাপ শেষ হতে পারে। তবে এখানেই শেষ নয়, রায়ে সংক্ষুব্ধ পক্ষ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে যাবে। যাদের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে বা যাদের সাজা কম হবে, তারা আপিল দায়ের করবেন। তবে শুনানি শেষ হতে ৪-৫ বছর লাগতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে ঢুকে অস্ত্রের মুখে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে জঙ্গিরা। তারা কুপিয়ে ও গুলি করে ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে হত্যা করে, যাদের মধ্যে নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, একজন ভারতীয় ও তিনজন বাংলাদেশি। সেই রাতে জিম্মিদের মুক্ত করতে শুরুতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন।
হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দেন। রায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এই সাত আসামি হলেন-রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে সাগর, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ। মিজানুর রহমানকে খালাস দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা কারাগারে আছেন। একই বছরের ৩০ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামির ডেথ রেফারেন্স ও মামলার যাবতীয় নথি হাইকোর্টে আসে। এর পরই প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার পেপারবুক প্রস্তুতের নির্দেশ দেন। এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ মামলাটি কোনোরকম মুলতবি না দিয়ে শুনানি অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া তিনি মনে করেন অপেক্ষায় থাকা ডেথ রেফারেন্স মামলা শুনানির জন্য বেঞ্চ বাড়ানো প্রয়োজন।