‘ঈদের আগে বাবাকে ফিরিয়ে দাও’ সন্তানের অশ্রুসিক্ত আর্জি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৩, ১০:৪৭ পিএম
ছবি-যুগান্তর
কতদিন বাবার মুখ দেখি না। হাতজোড় করি, ঈদের আগে আমার বাবাকে ফিরিয়ে দাওÑবলে কান্নায় ভেঙে পড়ে ২০১৬ সালে গুম হওয়া আনোয়ার হোসেনের মেয়ে রাইসা। তার মতো আরও অনেক শিশু ঈদের আগে প্রিয় বাবাকে ফিরে পেতে অশ্র“সিক্ত চোখে আকুল আর্জি জানিয়েছে।
গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে। সেখানেই এই দাবি জানায় শিশু-সন্তানরা।
আজ জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নির্যাতনবিরোধী দিবস। দিবসটি সামনে রেখে মায়ের ডাক এই কর্মসূচির আয়োজন করে। সংগঠনটির সমন্বয়কারী আফরোজা আক্তারের সভাপতিত্বে ও মনজুর হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সমন্বয়কারী সানজিদা আক্তার, মানবাধিকারকর্মী নুর খান।
মানববন্ধনে কান্নায় ভেঙে পড়ে বাবাকে ফেরত চেয়েছে ২০১৪ সালে গুম হওয়া চঞ্চল হোসেনের ছেলে ১০ বছরের আহাদ হোসেন, ২০১৩ সালে গুম হওয়া কাওসার হোসেনের মেয়ে লামিয়া আক্তার, ২০১৪ সালে গুম হওয়া মফিজুল ইসলামের ছেলে সহিদুল ইসলাম, ২০১৯ সালে গুম হওয়া আনিস ইসলামের মেয়ে ইনাশা, সোহেল হোসেনের মেয়ে শাফা হোসেন, ২০১৫ সালে গুম হওয়া নুর আলমের স্ত্রী রিনা আলম, ২০১৯ সালে গুম হওয়া ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী নাসরিন জাহান, ২০১৩ সালে গুম হওয়া মাহবুব হাসানের ভাই জাহিদ খান প্রমুখ।
শিশুরা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেছে, ঈদের আগেই আমাদের বাবাকে ফিরিয়ে দিন। বাবার হাত ধরে ঈদে ঘুরতে যেতে চাই। ঈদগাহে যেতে চাই। বাবার সঙ্গে স্কুলে যেতে চাই। আপনারা বাবাকে ফিরিয়ে দিন। আমাদের আদর করার মতো কেউ নেই। মানববন্ধনে মায়েরাও তাদের গুম হওয়া সন্তানকে ফিরে পেতে আকুতি জানান।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, তাদের পরিবারের কেউ গুম হয়েছেন ৫ বছর, কেউবা ৭ বছর, এমনকি ১০ বছর। এক যুগ পেরিয়ে গেলেও অনেকেরই খোঁজ মেলেনি। ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী নাসরিন জাহান বলেন, অন্তত এটুকু জানান আমার স্বামী জীবিত আছে নাকি নেই? কীভাবে বললে আপনারা আমাদের কষ্ট বুঝবেন? কার কাছে আমরা আমাদের যন্ত্রণার কথা বলব? কোথায় প্রতিকার পাব? কার যাছে যাব। যেখানেই যাই, সবাই উপহাস করে। কেউ খুঁজে দিচ্ছে না। যদি কেউ গুম করে থাকেন, তাহলে এতটুকু বলেন, সে কি বেঁচে আছে? আর যদি বেঁচে থাকে, তাহলে আমার স্বামী যদি অপরাধী হয়, তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করেন।
নুর আলমের স্ত্রী রিনা আলম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকেরা কয়েক দফায় গিয়ে জানতে চান নুর আলম কোথায়। আমাদের প্রতি এই নিষ্ঠুর আচরণ কেন করা হচ্ছে? অনেকে বলেন, গুম হওয়া মানুষটির খোঁজ নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের কাছে গেল তাদের বলা হয় তিনি বিদেশ চলে গেছেন। আবার বলেন, অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার সময় সাগরে ডুবে মরেছেন। এভাবে কেন উপহাস করা হচ্ছে? তাদের দয়া করে ফিরিয়ে দিন।
মানববন্ধনে মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা আক্তার জাতিসংঘের শান্তিরক্ষাবিষয়ক প্রতিনিধিদের গুম-খুনের শিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার আহ্বান জানান। তাদের প্রতি ‘অমানবিক আচরণের’ প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মানবাধিকারকর্মী নুর খান বলেন, এক যুগের বেশি সময় আমরা বলে আসছি গুম হওয়া মানুষের পরিবারগুলো দুর্বিষহ যন্ত্রণায় অমানবিক জীবনযাপন করছে। এখন তাদের কাছেই গুমের তথ্য চেয়ে উলটো তাদের নিদারুণ উপহাস করা হচ্ছে। যেসব মানবাধিকারকর্মী ও সংগঠন এসব পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছে, তাদের নানাভাবে চাপের মধ্যে রাখা হচ্ছে। এই অবস্থার অবসান হওয়া দরকার।