হলি ফ্যামিলিতে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে: টিআইবি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৩, ০৮:৫১ পিএম
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পরিচালিত হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। রাজনীতির কারণে ঐতিহ্যবাহী এ হাসপাতালের সেবার মান তলানিতে ঠেকেছে। মূলত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যানের একচ্ছত্র আধিপত্য এর জন্য দায়ী।
রোববার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। ‘হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংস্থাটি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান। গবেষণাটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষক তাসলিমা আক্তার ও মাহফুজুল হক।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একটি অলাভজনক স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল। ৫২৮ শয্যার এ হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকে গড়ে ৩০০ জন। শয্যা খালি থাকার কারণে হাসপাতালের আয় কমছে। অন্যদিকে হাসপাতাল পরিচালনার জন্য যে জনবল প্রয়োজন, নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার তিনগুণ বেশি। হাসপাতালটির ২০৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর কোনো কাজই নেই। শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়মনীতি মানা হয়নি।
গবেষণায় বলা হয়, হাসপাতালে যথাযথ আইন ও বিধিমালা না থাকায় অনিয়ম ও দুর্নীতির সৃষ্টি হয়েছে। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ট্রেজারার ও ক্ষমতাসীন রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কমিটিতে প্রাধান্য পেয়েছেন। হাসপাতাল পরিচালনা, নিয়োগ, উন্নয়ন কাজ, অনুদানের অর্থের আয়-ব্যয়সহ সিদ্ধান্ত গ্রহণে চেয়ারম্যানকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ, পদায়নে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত পছন্দ ও দলীয় বিবেচনা প্রাধান্য দেওয়া হয়। ডাক্তার নিয়োগে অবৈধ লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, হাসপাতালের আর্থিক সামর্থ্যরে ঘাটতি পূরণে আয় বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ। উলটো বিতর্কিত জেএমআই হাসপাতালের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি বিশেষায়িত ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে জেএমআইকে সুবিধা দিতে হলি ফ্যামিলির নিজস্ব ডায়ালাইসিস মেশিন অকেজো রাখা হয়। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হাসপাতালের বাইরে প্রাইভেট চেম্বার করেন। ইন্টার্ন ডাক্তারের মাধ্যমে রোগীকে চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ভিজিটিং কার্ড দেন। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সন্দেহ দূর করার অজুহাতে রোগীকে হাসপাতালের বাইরের প্রতিষ্ঠান থেকে প্যাথলজি পরীক্ষা ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। হাসপাতালের লাইসেন্স নিয়মিত নবায়ন না করা, ক্রয় আইন, তথ্য অধিকার আইন ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল সংক্রান্ত আইন ও বিধান অমান্য করলেও সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা হয়নি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, হাসপাতালটি পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে সুশাসনের ঘাটতি আছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গবেষণায় কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সোসাইটির চেয়ারম্যানের একচ্ছত্র আধিপত্য কমানো, জনবলের একটি কাঠামো তৈরি করা, প্রতিষ্ঠানটিকে রাজনীতিমুক্ত করা এবং ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা জরুরি।