ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল, তিস্তায় বন্যার পূর্বাভাস
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৩, ১০:৩৫ পিএম
ফাইল ছবি
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়সহ পূর্বাঞ্চলেও ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। দেশের ভেতরে ও উজানে বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে বাংলাদেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের চরাঞ্চল এবং নদীতীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরের নদী তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার এবং পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকার প্রায় সব নদ-নদীতে পানি বেড়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তা-ধরলা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। সুরমা-কুশিয়ারাসহ সিলেট অঞ্চলের আটটি নদীতেও পানি বেড়েছে। উভয় অঞ্চলেই বন্যা হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের জাফলংয়ে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি ১৪১ মিলিমিটার হয়েছে। এছাড়া ছাতক ও লালাখালে ৯৮, লরের গড়ে ৮০, কানাইঘাটে ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া পঞ্চগড়ে ১১৫, কুমিল্লায় ৮০, বরগুনায় ৬৩, কুড়িগ্রামে ৫৭, রংপুরে ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২২৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে সেখানে এমন বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া জলপাইগুঁড়িতে ৬৩, গোয়ালপাড়ায় ৯১, আগরতলায় ও গ্যাংটকে ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ বৃষ্টির কিছু পানি উত্তরাঞ্চলের তিস্তা আর বাকিটা সিলেট অঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার বিভিন্ন নদ-নদীতে যুক্ত হচ্ছে।
সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী-ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। এ বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানিও দ্রুত বাড়তে পারে। উজানে ও দেশের ভেতরে ভারি বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উজানে ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। ফলে বিশেষ করে সুরমা, কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন, ঝালুখালি, ভোগাই, কংস, সোমেশ্বরী, যদুকাটার পানির স্তর দ্রুত বাড়তে পারে। এতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার নিুাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার অববাহিকা ও আশপাশের উজানে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। ফলে নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়তে পারে।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চল। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এতে সুরমা, যাদুকাটা, রক্তি নদীতে পানি বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে অতিভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এতে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, উজানে বৃষ্টির কারণে খোয়াই, করাঙ্গী ও সুতাং নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। খোয়াই নদীর বাল্লা পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে চুনারুঘাট উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমির রোপা আউশ ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
গোলাপগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, টানা বৃষ্টিতে খাল, বিল, নদী ও হাওড়ে পানি হু-হু করে বাড়ছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এতে নিম্নাঞ্চল এলাকার লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে হাকালুকি ও বাঘা হাওড়সহ সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে। এ কারণে হাওর ও নদীপাড়ের শত শত মানুষ আতঙ্কে রয়েছে।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এতে চরাঞ্চল ও নিুাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ছে। পটোল, ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন সবজিখেত নষ্ট হয়ে গেছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ-আল-মামুন জানান, সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আগামী ২২ ও ২৩ জুন এসব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, উজানের ঢল আর ভারি বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লালমনিরহাটের চরাঞ্চল ও তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের হাজারের মতো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সোমবার ভোর ৬টার দিকে ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যারাজ পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও আবার কমে গেছে। এ বিষয়ে আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি।