ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে থাকছে বিআরটিসির ৫০০ বাস
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৩, ০৫:৪৪ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বিআরটিসির ৫০০ বাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু রাখতে বলেছেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে এক প্রস্তুতি সভায় এ সিদ্ধান্তগুলো জানান সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঈদের সময় গরুবোঝাই গাড়ি ছাড়া পণ্যবাহী যান, বিশেষ করে ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে মোট সাত দিন। ঈদের আগে তিন দিন, ঈদের দিন ও পরের তিন দিন থাকবে এ নিষেধাজ্ঞা।
মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী গরুর হাটগুলোকে সুশৃঙ্খল রাখতে হবে। মহাসড়কের উপর পশু ওঠানামা করা যাবে না; মহাসড়কের উপর পশুবাহী ট্রাক রাখা যাবে না। অস্থায়ী হাটের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে মহাসড়ক বা সড়কের যান চলাচল ও যানজটের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। পশুবাহী প্রত্যেক যানবাহনের সামনে এবং পেছনে যে হাটে সেগুলো তোলা হচ্ছে, তার নাম লিখে রাখতে হবে এবার।
ওবায়দুল কাদের বলেন, রমজানের ঈদের চেয়ে কুরবানির ঈদ অনেক চ্যালেঞ্জিং। এখানে অনেকগুলো বিষয় অন্তরায় হয়ে যায়। এগুলো অতিক্রম করতে আমাদের আরও চেষ্টা করতে হবে। গত রমজানে স্মরণাতীতকালের একটা ভালো ঈদযাত্রা আমরা দেখেছি। সবাই প্রশংসা করেছেন। এখানে একটা সমন্বয় কাজ করেছিল।
সেতুমন্ত্রী বলেন, রমজানে বৃষ্টির বিড়ম্বনা ছিল না, এবার সেটা আছে। ধীরগতির পশুবাহীগাড়ি, এটা সমস্যার সৃষ্টি করবেই। কুরবানির ঈদের জন্য আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। আমাদের একটা গলার কাঁটা আছে। সেটা হলো বিআরটি (গাজীপুর) এবং বৃষ্টি হলে কাদা। এ বছরই আমরা প্রজেক্টটা শেষ করার জন্য কাজ এগিয়ে এনেছি।
হাইওয়ে পুলিশের জনবলের অভাবের সমস্যা পূরণে জেলা পুলিশও দায়িত্ব পালন করছে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী জানান, ঈদের আগে ও পরে মিলিয়ে সিএনজি ফিলিং স্টেশন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে মোট ১৫ দিন। ঈদুল আজহার আগের ৭ দিন থেকে শুরু হয়ে শেষ হওয়ার ৭ দিন এবং ঈদের দিন থাকবে এ ব্যবস্থা। গ্যাস সংকটের কারণে বর্তমানে বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধ রাখা হয়। ঈদের পর আবার পুরোনো এ নিয়মে ফিরবে ফিলিং স্টেশন।
মন্ত্রী জানান, সড়ক-মহাসড়কের উপর থেকে ব্যানার, ফেস্টুন পোস্টার অপসারণের সিদ্ধান্তও এসেছে। ফিটনেসহীন, রুট পারমিটহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। শ্রমিকরা যেন ফিটনেসহীন গাড়ি ভাড়া করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।
মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে পর্যাপ্ত রেকার রাখার নির্দেশও এসেছে। সড়ক মহাসড়কের গর্ত সৃষ্টি হলে সেগুলো দ্রুত মেরামত করার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহণমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু সেতুসহ অন্যান্য সেতুর উপর গাড়ি নষ্ট হলে তা দ্রুত অপসারণ করতে হবে। চন্দ্রা, গাজীপুর, বাইপাইল ও আশপাশের এলাকার পোশাক কারখানাগুলোতে ধাপে ধাপে ছুটি দিতে হবে। আমি এ বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয় ও গার্মেন্টস মালিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেলের দিকে বাড়তি নজর রাখতেও নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, মোটরসাইকেলে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা হয়। বিষয়টা দেখতে হবে। সিগন্যালে যদি একঝাঁক মোটরসাইকেল দেখেন, দেখবেন হেলমেট আছে। আবার যদি একঝাঁক দেখেন হেলমেট নাই, তাহলে বুঝবেন, এরা পলিটিক্স করে।
কোনোভাবেই গাড়ি যেন উল্টোপাশ দিয়ে চলতে না পারে, সেজন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন সড়ক মন্ত্রী। তিনি বলেন, রং সাইড (উল্টো দিকে) দিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আপস করবেন না। সভায় হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি পরিসংখ্যান দিয়ে জানানো হয়, মে মাসে মহাসড়কে ২৫ হাজার মামলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি হয়েছে ফিটনেস না থাকার কারণে।
হাসপাতলের সামনে গিয়ে হর্ন বাজানোর প্রবণতা নিয়েও পুলিশকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের।
সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব আমিন উল্লাহ নুরী, ঢাকা সড়ক পরিবহণ সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙা, ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনসহ ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, সড়ক ও জনপদ কর্তৃপক্ষ, বিআরটিসি, সেতু বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।