দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করে অগ্নিদুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৩, ০৯:৪১ পিএম
ফাইল ছবি
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করে অগ্নিদুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। যে কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণে আইনের ব্যত্যয় হলে যিনি আইন ভঙ্গ করেছেন তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
সেক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট বা ভবনের মালিক যার অবহেলায় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটবে তাকেই শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, অবকাঠামো নির্মাণে ইলেকট্রিক তার থেকে শুরু করে যে ধরনের সামগ্রী ব্যবহার করা হয় তার গুণগতমান নিশ্চিতকল্পে বিএসটিআইসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোকে নজরদারি বাড়াতে হবে। আমরা যদি প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজ করি, তাহলে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত "বারবার অগ্নিদুর্ঘটনার কারণ: প্রতিরোধে করণীয়" শীর্ষক নগর সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা। নগর সংলাপে বক্তব্য দেন- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, ঢাকা ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী কামরুল হাসান, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ।
এতে সভাপতিত্ব করেন নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পাল। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, অগ্নিকাণ্ডের মত ঘটনা ইউকে আর সিঙ্গাপুরেও হয়। কিন্তু তাদের ওখানে ব্যবস্থা নেওয়ায় এখন কমে আসছে। আমাদের সমস্যা হলো বিল্ডিং ভেঙে পড়লে মালিককে জেলে দেওয়া হয়, এটা কেন? তিনি তো দোষী নন।
মন্ত্রী বলেন, একটি বিল্ডিং বা মার্কেট নির্মাণের সময় বিশেষজ্ঞ হিসেবে আর্কিটেক্ট থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ার সবাই পরিকল্পনা করে অবকাঠামো নির্মাণ করেন। নির্মাণের সময় যদি সঠিক নিয়ম মেনে অবকাঠামো নির্মাণ করা না হয় তাহলে সেখানে অগ্নিঝুঁকি অবশ্যম্ভাবী।
মন্ত্রী বলেন, গ্রামের জনগণকে শহরের সুবিধা দিতে হবে। প্রতিদিন পাঁচ হাজার লোক ঢাকায় আসছে উন্নত জীবনের জন্য। গ্রামে যদি তাদের জন্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া যায়, তারা ঢাকায় আসবেন না। আসলে এই দেশটা হলো আমাদের সবার, তাই এ দেশটিকে আরও উন্নত করতে সবাইকে কাজ করতে হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান ঢাকার সব ভবনের বিস্তারিত জরিপ এবং ডিজিটাল তথ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, অগ্নিদুর্ঘটনার প্রতিরোধে ইমারত নির্মাণ, জলাধার এবং ভূমির যথাযথ পরিকল্পনা ও ব্যবহার বাস্তবায়ন জরুরি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিয়া বলেন, আর্বান রিজেনারেশন প্রজেক্টটি পুরান ঢাকায় করতে চাই। বুড়িগঙ্গার পাড়ে যেকোন স্থানে তিনশত একর জায়গায় একটা পরিকল্পিত নগরী গড়ে তুলা হবে। সেখানে পার্ক, লেক, সড়ক, পুকুর, খেলার মাঠসহ সবকিছু থাকবে। তাছাড়া পূর্বাচলে সাড়ে চারশ বিঘার একটা বন আছে, এটি রক্ষা করতে আমরা চেষ্টা করছি।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভির ডিফেন্স পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অগ্নিকাণ্ড ঘটে মূলত অসচেতনতার কারণে। এজন্য ব্যবসায়ী ও মালিক সবাইকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, মার্কেট ও বড় ভবনগুলো একটি বড় সার্ভের মাধ্যমে হওয়া দরকার। এতে দুর্ঘটনা কমে আসবে। আমরা চাইলেও রাতারাতি মার্কেটগুলো উচ্ছেদ করতে পারব না। কিন্তু অগ্নিঝুঁকি কমানোর জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। ঢাকা শহরে পুকুরগুলোকে খনন করে উদ্ধার করতে হবে। এখনো অনেক পুকুর আর জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে।