আগুন সন্ত্রাসীরা দেশ ও মানুষের মঙ্গল চায় না: প্রধানমন্ত্রী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৯ পিএম
ফাইল ছবি
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগুন সন্ত্রাসীরা এ দেশ ও মানুষের মঙ্গল চায় না। এরা কারো ভালো দেখতে পারে না। এটাই হলো বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ সালের পর এবং ১৯৭৭ সালে যে হত্যাকাণ্ড চালানো হয় মানুষ সেই ঘটনাগুলো ভুলে যাচ্ছে। অথচ সেই সময় জিয়াউর রহমান নাকি হাসতে হাসতে ফাঁসির রায় লিখত। বিচার নাই, ফাঁসি হয়ে গেছে পরে রায় বের হয়েছে। কী জুলুম? কী অত্যাচার? কী অন্যায়? এসব মানুষ এখন ধীরে ধীরে জানতে পারছে। জিয়া শুরু করেছিল, তার বউ করল এবং তার ছেলেরা মিলে পরে এই অগ্নিসন্ত্রাস করল।
মঙ্গলবার গণভবনে ঈদ পূর্ববর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে শুরুতে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনের সময়ে কিভাবে বিনাবিচারে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে তার ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ সময় ভুক্তভোগী কয়েকজনের পরিবারের সদস্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসব ঘটনার বিচার চান।
অনুষ্ঠান শেষে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের হাতে ঈদ উপহার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন ব্যবসায়ীও ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বাংলাদেশের জন্য আমার আব্বা সারাজীবন কষ্ট করে গেছেন। আমার একটাই চেষ্টা দেশের মানুষ যেন একটু ভালো থাকে। আজকে মানুষ যখন ভালো অবস্থার দিকে যাচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে একটু সচ্ছল হওয়ার পথে ঠিক সে সময় আবারো অগ্নিসন্ত্রাস, মার্কেটে আগুন, নানাভাবে মানুষের ক্ষতি করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের কথা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে শুরু হত্যাকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, যখন বিরোধী দলে ছিলাম এমন একটা দিন নাই যে লাশ টানতে হয়নি। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী হত্যা করা হয়েছে।
সম্প্রতি বিভিন্ন মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েক দিন ধরে হঠাৎ করেই যেন মার্কেটে আগুন লাগাটা বেড়ে গেল। আমার মনে সন্দেহ লাগল, এটাও নাশকতা নাকি? যারা গাড়িতে, বাসে, রিকশায় আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পোড়াতে পারে এরা মানুষের ক্ষতি করাটাই জানে। ঈদের সময় মানুষ একটু ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে, সেই পথটাও যেন তারা বন্ধ করে দিতে চায়।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা আপনজন হারিয়ে কষ্ট করে বড় হয়েছেন শুধু এটুকু বলতে পারি তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই। আমি আপনাদের মতো, হঠাৎ একদিন দেখলাম আমার কেউ নেই। বিদেশে বোনকে নিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে অসহায় অবস্থায় ছয় বছর রিফিউজির মতো থাকতে হয়েছে। কাজেই আমরা এই কষ্টটা বুঝি।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
কেন আমার এত বড় ক্ষতি করা হলো
২০১৪ সালে ‘বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার রূপগঞ্জের সালাউদ্দিন অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, কথা বলার সময় সুস্থ মানুষের একটি ছবি আপনারা দেখেছেন সেটা আমি। আর একই ফ্রেমের নিচে ঝলসে যাওয়া ছবিটাও আমার। দেখুন আমাকে কী করে দেওয়া হলো। আমি একটা সাধারণ মানুষ। কেন আমার এত বড় ক্ষতি করা হলো।
সন্তান জিজ্ঞেস করে হাত কোথায়
ওই সময় অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হয়ে দুই হাত কবজি পর্যন্ত হারান পুলিশের এসআই মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। আপনি প্রয়োজন মনে করে আজ আমাদের ডেকে এনেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার সন্তান আমাকে জিজ্ঞেস করে আমার হাত কোথায় গেল? আমার হাতের অবস্থা এমন কেন, আমি কোনো জবাব দিতে পারি না। আমি আমার সন্তানকে জড়িয়ে ধরে মাথায় গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে পারি না। এটা যে কত কষ্টের তা বলে বোঝানোর মতো না। আমি এর বিচার চাই।
চেয়ার থেকে উঠে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী
বিমানবাহিনীতে কর্মরত সার্জেন্ট মোশারফকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে জিয়াউর রহমান- এমনটা উল্লেখ করে তার কন্যা বলেন, আমার বুকে অনেক কষ্ট। আমি কথা গুছিয়ে বলতে পারি না। কী বলে আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাব সেই ভাষা আমার জানা নেই। এ সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রধানমন্ত্রীকে তার মাথায় হাতবুলিয়ে দিতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেয়ার থেকে উঠে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন। সার্জেন্ট মোশারফের মেয়ে এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এতদিনেও জানতে পারিনি স্বামীর কবর কোথায়
প্রধানমন্ত্রীর সামনে অনুভূতি প্রকাশ করেন ৭৭ সালে স্বামী হারা সার্জেন্ট দেলোয়ারের স্ত্রী নূরনাহার বেগম। তিনি বলেন, স্বামীকে কোনো কারণ ছাড়াই জিয়াউর রহমান হত্যা করে। তার পরিবারকে না জানিয়ে ফাঁসি দেয় এবং কবর কোথায় দেয় সেটাও বলেনি। এতদিন আমরা জানতে পারিনি আমার স্বামীর কবর কোথায়। এখন অনেকে লেখালেখি করছেন তারা জানাচ্ছেন তার কবর আজিমপুর গোরস্থানে।